বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির জরুরি সংবাদ সম্মেলন

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:৫৭ পিএম
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির জরুরি সংবাদ সম্মেলন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বরোচিত হামলা এবং সংবিধান ও জুলাই ঘোষণাপত্রে তাদের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়া, ঐকমত্য কমিশনসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একমাত্র নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টিকে আমন্ত্রণ না জানানো, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতামত গ্রহণ না করার বিষয়ে বিএমজেপি নেতৃবৃন্দরা শনিবার (৯ আগস্ট) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা সরকারের প্রতি বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের  আব্দুস সালাম অডিটোরিয়ামে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএমজেপি'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডলের সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি আর কে মন্ডল রবিনের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বিএমজেপি'র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ (অব.) নিরদ বরণ মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ বর্মন, চাঁনমোহন রবিদাস, মহাসচিব দিলীপ কুমার দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন কুমার ব্যাপারী, সদস্য অনিল পাল, দিলীপ কুমার দাসসহ বিএমজেপি'র কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল বলেন, বিগত ৫ আগস্টের পরবর্তী সময় থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ধর্ম অবমাননার মিথ্যে ট্যাগ লাগিয়ে বর্বরোচিত হামলা, লুটপাট, বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুর, ধর্ষণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অমানবিক ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেই চলছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখছি না। যখনই দেশে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন বা অস্থিরতা দেখা দেয় তখনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এসব ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হচ্ছে। এ ঘটনাগুলো আমাদের সেই বিভীষিকাময় ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালের স্মৃতিতে ফিরিয়ে আনছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইতিহাস আবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নতুন করে অস্তিত্বের সংকটে পরেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের সংবিধান, যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে, তা ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রয়েছে এবং সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ প্রায় অনুপস্থিত। এই সংবিধান আমাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সমঅধিকার নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমরা বছরের পর বছর ধরে সংবিধানের এই বৈষম্যমূলক দিকগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এসেছি কিন্তু কোনো সরকারই এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি।

সুকৃতি কুমার মন্ডল বলেন, দেশের জনগণের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা বা সুখবর নেই। যখন নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি হচ্ছে, তখন দেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নটি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। আমরা মনে করছি, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং ২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনার পরিপন্থী।

এই প্রেক্ষাপটে, আমরা বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি)’র পক্ষ থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নিন্মোক্ত জরুরি দাবিগুলো জানাচ্ছি-

১. হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল সহিংসতার ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে যেন কোনো অপরাধী পার না পায়, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে।

২. ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা, বাড়িঘর ও উপাসনালয় পুনর্র্নিমাণে পর্যাপ্ত সহায়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অপরিহার্য।

৩. সংবিধানের সংস্কার: একটি সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হোক। এই কমিশনকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ সুরক্ষা, অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে সংবিধানের ধারাগুলো সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হোক।

৪. জুলাই ঘোষণাপত্র সংশোধন: জুলাই ঘোষণাপত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সম্পত্তি রক্ষা এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এই সনদের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করার আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার ব্যবস্থা করা হোক।

৫. বিশেষ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা, জমি দখল এবং হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক, যা সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

৬. রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ: জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক।

বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বিএমজেপি'র সহ-সভাপতি আর কে মন্ডল রবিন বলেন, আসুন আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির বন্দনে একটি  সুন্দর সুশৃংখল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদেরকেই সম্মিলিতভাবে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বিএমজেপি এই লড়াইয়ে আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে।  সূত্র: প্রেসবিজ্ঞপ্তি

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে