গল্প

জানালার ওপারে

মোঃ শামীম মিয়া | প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম
জানালার ওপারে
বৃষ্টির শব্দ যেন স্মৃতির চাবি। জানালার পাশে বসে অনন্যা আজ আবার সেই চাবি ঘুরিয়ে খুলে ফেলল মনের গোপন দরজা। বাইরে শ্রাবণের একটানা ধারা, আকাশে কালো মেঘের ভার, আর হৃদয়ের মধ্যে এক শূন্য হাহাকার। তন্ময়ের সঙ্গে প্রথম দেখা, প্রথম হাত ধরা, প্রথম রিকশাভ্রমণ—সবই একেকটি বর্ষার ভেজা দিন। কলেজের করিডোর ভিজে যাচ্ছিল, আর তাদের চোখে ছিল একরাশ অনিশ্চিত উজ্জ্বলতা। ছাতার নিচে গা ঘেঁষে হাঁটা, বইয়ের পাতায় লেখা ছাপা চিঠি—প্রেম যেন তখন ছিল বৃষ্টির মতোই আকস্মিক, আবেশী এবং অনিবার্য। তবে ভালোবাসা কি চিরকাল থাকে? সে বছর বর্ষার শেষে পাহাড়ি ঝর্ণায় বেড়াতে গিয়েছিল তন্ময়। হঠাৎ এক ভয়ংকর বন্যায় স্রোতের টানে হারিয়ে যায় সে। তিনদিন পরে খুঁজে পাওয়া যায় শুধু তার ব্যাগটা—ভেজা খাতার ভাঁজে লেখা ছিল, "বর্ষায় ফিরব, প্রতিশ্রুতি দিলাম।" সেই থেকে প্রতিটি বর্ষা অনন্যার কাছে একটি প্রতীক্ষার প্রতিচ্ছবি। প্রতিবার বৃষ্টি এলে সে জানালার ধারে বসে, চুপচাপ, কোনো আওয়াজ না করে। যেন এই ঝরঝর শব্দে কোথাও মিশে আছে একটুকরো তন্ময়। আজও ঠিক তেমনই একটি বিকেল। আকাশ মেঘে ঢাকা, বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে রক্তাভ আলো ছড়ায়, আর অনন্যা এক কাপ চায়ের পাশে রেখে অপেক্ষা করে—একটি শব্দের, একটি উপস্থিতির, হয়তো একটি অলৌকিক সংকেতের। হঠাৎ কাঁচে শব্দ—টোক টোক! তন্ময় কি…? অনন্যা চমকে তাকায়। বাইরে কেউ নেই। শুধু অন্ধকার আর বৃষ্টি। কিন্তু কাঁচের উপর স্পষ্টভাবে ভেসে ওঠে একটি লেখা—"তুমি ভালো আছ তো?" লিপিটি ঠিক যেমন তন্ময় লিখত। তন্ময়ের হাতের লেখা কেউ ভুলতে পারে না। অনন্যা কাঁপা হাতে কাঁচ ছোঁয়, জলের ফোঁটা গলে পড়ে গালে। এক মুহূর্তের জন্য বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ঘরের মধ্যে ছায়া নড়ে ওঠে। হালকা গন্ধ, একটা পরিচিত নিঃশ্বাসের মতো। তন্ময়ের কণ্ঠস্বর যেন দূর থেকে আসে—"আমি এখানেই আছি, জানালার ওপারে, প্রতিটি বর্ষায়।" বাইরের বৃষ্টি তখনও পড়ে চলেছে। টুপটাপ শব্দে যেন সে কথা বলে চলে, বলে—ভালোবাসা কখনো হারায় না, কেবল রূপান্তরিত হয়।

এই প্রতিবেদনটির তথ্য, বক্তব্য ও সকল দায়-দায়িত্ব লেখকের। এর জন্য সম্পাদক দায়ী থাকবেনা