রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। দীর্ঘদিনের চাপ ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে রিজার্ভ এখন ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে, যা তে স্বস্তির সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, রোববার (১০ আগস্ট) মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০২৪৮ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী এই পরিমাণ ২৫২৩২ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার বা ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে বৈদেশিক আয়ের দুই প্রধান উৎস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে—রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীদের পাঠানো আয় বেড়েছে, পাশাপাশি হুন্ডি কার্যক্রম কমে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিক পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও শক্তিশালী হয়েছে। রপ্তানি খাতেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে—বিশেষত তৈরি পোশাকের পাশাপাশি কৃষিপণ্য, চামড়া ও হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে।
গত ৪ আগস্ট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২৪.৯৮ বিলিয়ন ডলার) এবং ২৪ জুলাই ছিল ৩০০০৪ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার (বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২৪৯৮৮ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ডলার)। সর্বশেষ ৬ আগস্ট পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩০০৭৭ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার, আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২৫০৫৭ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন ডলার। এই ধারাবাহিক অগ্রগতি বাজারে ডলারের জোগান বাড়িয়েছে ও আমদানি খরচ মেটানো সহজ করেছে।
গত বছরের একই সময়ে (আগস্ট ২০২৪) রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার এবং নিট রিজার্ভ ছিল মাত্র ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। সে সময় ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ নেমে গিয়েছিল ১৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে, যা ছিল গত এক দশকের মধ্যে অন্যতম নিম্ন পর্যায় এবং আমদানি খাতে তীব্র চাপ তৈরি করেছিল।
বর্তমানে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের ধারা বিবেচনায় এই রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের বেশি আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে, অন্তত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম রিজার্ভ নিরাপদ ধরা হয়—সে হিসেবে বাংলাদেশ এখন স্বস্তিকর পর্যায়ে রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে টাকার ওপর চাপ কমবে, ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থা বাড়বে। তবে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করা, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ স্থিতিশীল রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার বর্তমানে অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে এবং অর্থনীতির ইতিবাচক ধারা বজায় থাকলে রিজার্ভ দ্রুত ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছুঁতে পারে।