উত্তরায় মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধের দাবিতে অভিভাবকদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১২ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:৪৩ পিএম
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধের দাবিতে অভিভাবকদের বিক্ষোভ

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য ও অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে তাঁরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ, কোচিং ব্যবসা বন্ধ ও ক্ষতিপূরণসহ একাধিক দাবি জানান।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবকদের হাতে নিহত সন্তানের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল, চোখে ছিল অশ্রু। স্লোগানে তাঁরা বলছিলেন— “কোচিংয়ের নামে ব্যবসা, বন্ধ কর, বন্ধ কর”, “ফুল-পাখি সব পুড়ল কেন, জবাব চাই, দিতে হবে”, ও "শিক্ষা না ব্যবসা—শিক্ষা, শিক্ষা"।

প্রতিবাদকারীরা অভিযোগ করেন, দুর্ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কেউ তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং মানববন্ধনে আসা শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে নেওয়া হয়েছে। আরও অভিযোগ ওঠে, মানববন্ধনের সময় কনক নামের এক শিক্ষক এক অভিভাবকের গায়ে হাত তোলেন, যার অপসারণও দাবির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অভিভাবকদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

* যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের দিনের স্কুলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ

* সারা দেশে মাইলস্টোনসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোচিং ব্যবসা বন্ধ

* নিহত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারের জন্য সরকারি পর্যায়ে ৫ কোটি ও আহতদের জন্য ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ

* স্কুলের পক্ষ থেকে নিহতদের জন্য ২ কোটি এবং আহতদের জন্য ১ কোটি টাকা জরিমানা

* রানওয়ের নিকট থেকে স্কুল স্থানান্তর অথবা রানওয়ের অবস্থান পরিবর্তন

* কোচিং ব্যবসার মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত স্কুল শাখার প্রধান শিক্ষিকা খাদিজার অপসারণ ও বিচার

* বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ জনবসতিহীন এলাকায় পরিচালনা

নিহত শিক্ষার্থী মারিয়াম উম্মে আফিয়ার মা উম্মে তামিমা আক্তার জানান, তিনি আগে মেয়েকে কোচিংয়ে দেননি, কিন্তু আফিয়া বলেছিল, "আম্মু, আমি যদি কোচিং না করি, মিসরা আমাকে আদর করে না।" পরে কোচিংয়ে ভর্তি দিলে মেয়েটি খুশি হয়ে জানায়, “এখন মিসরা আমাকে অনেক আদর করে।” তামিমা আক্তারের অভিযোগ— পরীক্ষায় খারাপ করিয়ে ও মানসিক চাপ দিয়ে অভিভাবকদের কোচিং করাতে বাধ্য করা হয়।

একই অভিযোগ তোলেন নিহত বোরহান উদ্দীন বাপ্পীর বাবা মোহাম্মদ আবু শাহীন। তাঁর দাবি, স্কুলের শিক্ষকরা বারবার বলেন, সন্তান ক্লাসে পড়া পারে না, ফলে মানসিকভাবে চাপে ফেলে কোচিংয়ে ভর্তি করাতে বাধ্য করা হয়। তাঁর আরেক ছেলে প্লে গ্রুপে পড়লেও তাকে নিয়েও একই চাপ দেওয়া হচ্ছে।

অভিভাবকেরা বলেন, এই দুর্ঘটনা হঠাৎ ঘটে যায়নি— বরং এটি দীর্ঘদিনের অবহেলা, লোভ ও দায়িত্বহীনতার পরিণতি। তাঁদের দাবি, এ ঘটনার সঠিক তদন্ত, দোষীদের শাস্তি এবং এমন দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে