তেজস্ক্রিয় কনটেইনার: কাস্টমস-পরমাণু কমিশনের জটিলতা ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম বন্দর

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০৬ পিএম
তেজস্ক্রিয় কনটেইনার: কাস্টমস-পরমাণু কমিশনের জটিলতা ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দরে লোহার স্ক্র্যাপ ও শিল্পের কাঁচামাল বোঝাই ১৩টি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হওয়ার পর সেগুলো অপসারণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বন্দরে ঝুঁকিপূর্ণ এসব কনটেইনার পড়ে থাকায় উদ্বেগ বেড়েছে কর্তৃপক্ষের মধ্যে।

বন্দর সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে স্থাপিত মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের বিশেষায়িত গেট দিয়ে পণ্য অতিক্রমের সময় এসব কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি ধরা পড়ে। সর্বশেষ ৩ আগস্ট ব্রাজিল থেকে আসা একটি লোহার স্ক্র্যাপ বোঝাই কনটেইনারে সিজিয়াম-১৩৭ ও থোরিয়াম-২৩২ ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হয়।

গত পাঁচ বছরে এ ধরনের মোট ১৩টি কনটেইনার শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। তবে চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস ও পরমাণু শক্তি কমিশনের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি না থাকায় এ কনটেইনারগুলোর তত্ত্বাবধান ও নিষ্পত্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিচালক ড. শাহাদাত হোসেন বলেন, “কে দেখভাল করবে, সেটি নির্ধারিত না থাকায় প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না।”

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝুঁকি বিবেচনায় এসব কনটেইনার দ্রুত অপসারণ প্রয়োজন। বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, “তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কাস্টমসকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।”

অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ জানিয়েছে, আইনের আওতায় এ ধরনের পণ্য নিলামে তোলার সুযোগ রয়েছে। তবে তার আগে পরমাণু শক্তি কমিশনের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতিষ্ঠানটির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান বলেন, “কোনো তাড়াহুড়ো নয়। কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

এর আগে ২০১৪ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম বন্দরে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ধরা পড়ে। এরপর প্রায় প্রতিবছর কয়েকটি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হলেও মাত্রা সহনীয় হলে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিন্তু যখন মাত্রা ২.৩-এর বেশি হয়, তখনই কনটেইনারগুলো আটকে রাখা হয়। বর্তমানে শনাক্ত কনটেইনারগুলো বন্দরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষিত আছে।

শুধু আমদানি নয়, রফতানিযোগ্য কিছু পণ্যের মধ্যেও তেজস্ক্রিয় পদার্থের অস্তিত্ব মিলেছে। জাহাজ কাটা শিল্পের পণ্যেও এর প্রমাণ পাওয়ার পর সেগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে ঢাকার সাভারে অবস্থিত তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে