কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় সোনালী আঁশ পাটের আঁশ ছাড়াতে ও রোদে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত থাকে কৃষকরা। পাট গাছ দীর্ঘদিন পানিতে ভিজিয়ে রেখে তা পঁচে যাওয়ার পর পাট থেকে আঁশ সংগ্রহ করেন তারা। এ বছর কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় পাট জাগ দিতে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয় নি চাষীদের।
গত কয়েকদিনে সরেজমিন উপজেলার শাহেদল,সাহেবেরচর, সিদলা,পুমদি,জিনারী সহ বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষ মিলে রাস্তার পাশে বসে কিংবা বাড়ির উঠোনে বসে গাছ পাট থেকে আঁশ সংগ্রহ করে ধোয়ার পর রোদে শুকাছে।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যখন বর্ষার পানিতে খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরে ওঠে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে সোনালী আঁশ ঘরে তুলতে বেড়ে যায় কৃষক-কৃষাণীর ব্যস্ততা। প্রতি বছরের মতো চলতি মৌসুমে হোসেনপুরে নতুন পাট ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা। এখন চলছে পাটের আঁশ ছাড়ানো ও রোদে শুকানোর কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডোবা ও বিলের পানির মধ্যে জাগ (পঁচাতে) দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন কৃষক। শুধু কৃষক নয় এলাকায় পাটকাঠির চাহিদা থাকায় কৃষকদের সঙ্গে প্রতিবেশিরাও আঁশ ছাড়িয়ে দিয়ে পাটকাঠি সংগ্রহ করছেন।
ইতোমধ্যে বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। দামও ভাল। উপজেলার পৌরসভা হাট ও অন্য হাটগুলোতে বিভিন্ন জাতের পাট বেচা-কেনা হচ্ছে। তোষা জাতের পাট ২ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা আর মেচতা জাতের পাট ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ন্যায্য মূল্য পেয়ে পাট চাষিদের মাঝে এখন পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৩৯৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
কৃষক শাহিদ মিয়া জানান, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা। ফলন ভাল হলে এক বিঘা জমিতে ১২ থেকে ১৮ মণ পাট পাওয়া যায়। দাম বেশি হলে লাভ ও বেশি হয়।
সোনালী আঁশ ছাড়ানো শ্রমিক রাকিব মিয়া জানান,পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়িয়ে দিলে আঁশ মালিক নিয়ে নেয় আর আমরা কাঠিগুলো নিয়ে নিই। এতে করে লাভবান হওয়া যায়। পরবর্তীতে এসব কাঠিগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
সাহেবের চর গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম, রুবেল মিয়া,আসন মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তবে পড়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলন ভালো হয়েছে তাদের। এবার তারা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন বাজারে পাটের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে আগামী বছর আরো বেশি জমিতে পাট চাষ করবেন তারা মনে করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবির বলেন, এ উপজেলায় তোষা জাতের পাটের আবাদই বেশি করেন এ এলাকার কৃষকরা। এলাকার কৃষকরা যাতে সকল জাতের পাট আবাদে আগ্রহী হয় ও যথাযথভাবে উৎপাদন করতে পারে এবং স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল পাট উৎপাদন করতে পারে এ জন্য প্রতিনিয়ত কৃষকদেরকে পরামর্শ প্রদান করেছেন। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে পাটকে মুক্ত রাখতেও পরিমিত পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ।