ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ফসলি জমিতে এক্সেভেটর (ভেকু) দিয়ে দিনে রাতে অবৈধ ভাবে কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে জমির উর্বর মাটি কেটে পুকুর খনন, ইটভাটাসহ জমি ভরাট কাজে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকায় মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই কমছে না। কালীগঞ্জ উপজেলার অনেক মাঠে কৃষি জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করে থাকেন কৃষকেরা। এই সব ফসল স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবারাহ করে থাকেন তারা। এখানে সোনালি আঁশখ্যাত পাট, পেঁয়াজ, আলু, ফলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচা মরিচ, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতি বছর এ উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এ কারণে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃষকদের থেকে মাটি কিনে তা ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন মাটি ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে,কালীগঞ্জ উপজেলায় কয়েকটি শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র গড়ে উঠেছে। এরা দরিদ্র কৃষককে নানা প্রলোভন দেখিয়ে জমির উর্বর অংশের মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার অসচেতন কৃষকদের কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে নগদ অর্থ পেতে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ ছাড়া কৃষিজমি থেকে কেটে নেয়া মাটি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রলি গাড়ি। এসব ট্রলির কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীন সড়ক গুলো খানাখন্দ তৈরি হয়ে দ্রুত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া ট্রলি চলাচলের কারণে আবাদি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার সাতগাছিয়া গ্রামের ধানী জমি এক্সেভেটর দিয়ে কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। যার ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক। সাতগাছিযা গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, সমতল জমি ছিলো এখানে পুকুর কাটার ফলে প্রায় ২শ’ বিঘা জমির আবাদ নষ্ঠ হবে। আমরা গ্রামের লোক প্রথমে বাধা দিয়ে পুকুর কাটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের সহযোগিতা করার কারণে পুকুর কাটা বন্দ করা সম্ভব হয়নি।এই পুকুর খনন করার ফলে সাধারন কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।সাব-কন্ট্রাকটর তারেক রহমান জানান, আমি ডিসি অফিস থেকে অনুমোদন নিয়ে মাটি কাটার কাজ করছি। তবে অনুমোদনের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন আবেদন করেছি। তিনি আরো বলেন, এই মাটি বিক্রি করছেন জমির মালিক মোস্তফা কামাল। এই মাটি ৬ লেনের রাস্তা নির্মাণের কাজে ব্যরহার করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এই মাটি ইটভাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রি করছেন বলে জানাগেছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট সয়েল মাইক্রোবায়োজি এ্যান্ড বায়োকেমিস্ট্রি কেন্দ্রিক গবেষণাগার ঢাকার উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম জগলুল পাশা জানান, মাটির উপরের টপ সয়েলটা ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই দরকার। যদি এই টপ সয়েল বা জৈব উপাদান কেটে ফেলা হয় তাহলে ওই জমিতে আর ভালো ফসল আশা করা যাবে না। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল আলম জানান, মাঠে মাঠে দিনে রাতে মাটি কেটে ট্রলিতে নিয়ে যাচ্ছে এমন খবর তার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।