এক বিয়াইয়ের প্রতারণায় নিঃস্ব আরেকজন!

জমি বিক্রির কথা বলে কোটি টাকা নিয়ে পলায়ন

এফএনএস (মোঃ আমিরুল ইসলাম নয়ন; গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ) : | প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:০৮ পিএম
জমি বিক্রির কথা বলে কোটি টাকা নিয়ে পলায়ন

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জমি লিখে দেওয়ার কথা বলে এক বিয়াইয়ের কাছ থেকে এক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে আরেক বিয়াই। বিষয়টি নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে ভুক্তভোগী।

খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সুরুজ মিয়া ও একই ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের সাথে পূর্ব পরিচিত ছিলো। পরিচয়ের সূত্র ধরে সিরাজুল ইসলাম সাতকাহনিয়া মৌজায় তার ১২ শতাংশ একটি জমি বিক্রির ইচ্ছা পোষণ করলে সুরুজ মিয়া আগ্রহ দেখায়। এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫ নভেম্বর সুরুজ মিয়া অপরপক্ষ সিরাজুল ইসলামকে জমির মূল্য বাবদ এক কোটি টাকা প্রদান করে। এই ঘটনার কিছুদিন পর সুরুজ মিয়ার ছেলে সিয়ামের সাথে সিরাজুল ইসলামের মেয়ে সূমাইয়া আক্তারের বিয়ে হলে দুই পরিবারের বন্ধন আরো দৃঢ় হয়। তবে টাকা বুঝে পাওয়ার পর জমি লিখে দিতে গরিমসি শুরু করে সিরাজুল ইসলাম। সর্বশেষ চলতি বছরের আগস্ট মাসের প্রথমে জমি লিখে দিতে রাজি হয় সে। কথামতো দলিল লেখকের মাধ্যমে দলিল লিখাসহ যাবতীয় কাজকর্ম শেষ করা হয়। কথা ছিলো ১৭ আগস্ট সকালে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে। কিন্তু ১৭ আগস্ট সকাল থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তার বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে আশপাশের লোকজন জানায় তারা সেগুলো বন্ধ করে   অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছে সে। বিষয়টি নিয়ে উৎকণ্ঠায় থানায় জিডি করেছে ভুক্তভোগী সুরুজ মিয়া।

ভুক্তভোগী সুরুজ মিয়া বলেন, ' আমি একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। সরকারি চাকরি করে সারা জীবন যতটুকু জমাতে পেরেছি তার সাথে পেনশনের টাকা মিলিয়ে এক কোটি টাকার মত আমার বিয়াই হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কথা ছিল তিনি আমাকে তার ১২ শতাংশ জমি লিখে দিবেন। সব ঠিকই ছিলো, আমরা দুজন মিলে দলিল প্রস্তুত করেছিলাম, দলিলে যদিও টাকার পরিমাণ ৭৫ লক্ষ লেখা হয়েছে।  রেজিস্ট্রি করার দিন তিনি অনুপস্থিত। তার বাসায় গিয়ে দেখি বাড়ি-ঘরে তালা দিয়ে কোথায় যেন চলে গেছে, মোবাইল নাম্বার বন্ধ। বাধ্য হয়ে থানায়  লিখিত অভিযোগ করেছি। এই টাকার কিছু হলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবে। শেষ সম্বল এই টাকাগুলো ছাড়া আমার কিছু নেই'।

বিষয়টি সম্পর্কে সুরুজ মিয়ার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা মায়া বলেন,' এরকম হবে তা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। ঘটনার ৮/১০দিন আগে তারা আমাদের বাড়িতে এসে কৌশল করে ছেলে বউ সূমাইয়াকে নিয়ে যায়। এখন আমরা সূমাইয়ার সাথেও কথা বলতে পারছি না। কি করবো কিছুই বুঝতে পারতেছি না। এদিকে এসব শুনে আমার ছেলে সিয়াম সৌদিআরব থেকে দেশে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেছে'।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে নয়াকান্দি গ্রামে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে গেলে দেখা যায় বাড়িতে কেউ নেই, দরজায় তালা ঝুলছে । তার সন্ধান চেয়ে ভবেরচর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। আশপাশের দোকানদাররা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি দোকানে আসছেন না। 

বিষয়টি সম্পর্কের গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ' এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে