ঋণ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা, নীতি বাস্তবায়নে দুর্বলতা ও সুশাসনের ঘাটতির অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এইচ বি এম ইকবালের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুনভাবে গঠিত ছয় সদস্যের এই পর্ষদে আগের কোনো পরিচালককে রাখা হয়নি।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিমিয়ার ব্যাংককে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটির ঋণ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও পর্ষদ পরিচালনায় দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। সুশাসন ফিরিয়ে আনতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর এ পদক্ষেপ নেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন পর্ষদে একজন উদ্যোক্তা পরিচালক এবং পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছেন। উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিনিধি ডা. আরিফুর রহমান। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. ফোরকান হোসেন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফরিদুল ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-এর অধ্যাপক শেখ মোর্শেদ জাহান এবং প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক এম নুরুল আলম।
তবে নতুন পর্ষদে এখনো কাউকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, পরবর্তী সভায় বোর্ডের সদস্যদের মধ্য থেকেই একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হবে।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবালের হাতে। তিনি দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান পদে থেকে ব্যাংক পরিচালনা করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন। একই সঙ্গে তার ছেলে মঈন ইকবাল ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদ থেকেও সরে দাঁড়ান। পরবর্তীতে আরেক ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন।
তবে পর্ষদের ওপর ইকবাল পরিবারের প্রভাব ও বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। চলতি বছরের এপ্রিলে আদালত কর্তৃক জব্দ হওয়া ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের ঘটনাও সমালোচনার জন্ম দেয়, যা প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগকে আরও প্রবল করে তোলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এ পদক্ষেপে কার্যত প্রিমিয়ার ব্যাংকের পুরনো পর্ষদের বিদায় ঘটল এবং নতুনভাবে গঠিত পর্ষদের হাতে ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হলো।