কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুদকের অভিযান

মোঃ আল-আমিন দেওয়ান; কালীগঞ্জ, গাজীপুর | প্রকাশ: ২৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুদকের অভিযান
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দুদক গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পরিচালিত এই অভিযানে বেরিয়ে এসেছে সরকারি এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ভয়াবহ চিত্র। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সময়মতো কর্মস্থলে না আসা, টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য আদায়, নষ্ট যন্ত্রপাতি, রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ একাধিক অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক এনামুল হক এর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল এই ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে। দুদকের কাছে আগে থেকেই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ ছিল। সরেজমিনে তদন্ত করতে এসে দলটি অভিযোগগুলোর প্রমাণ পায়। তদন্তে দেখা যায়, হাসপাতালে কর্মরত অনেক অফিসার ও কর্মচারী সময়মতো অফিসে আসেন না, যার ফলে রোগীরা সময়মতো সেবা থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়া, সরকার নির্ধারিত ৩ টাকার টিকেটের পরিবর্তে রোগীদের কাছ থেকে ৫ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। অভিযানে আরও দেখা যায়, হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ আল্ট্রা-সোনোগ্রাম ও এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অচল ও নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে, ফলে রোগীরা বাইরে থেকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে এসব পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন। রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার পরিমাণে কম দেওয়া হচ্ছে এবং খাবারের মানও অত্যন্ত নিম্ন। হাসপাতালের রান্নাঘরসহ সার্বিক পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা। এছাড়াও, হাসপাতালের স্টোরে রক্ষিত মালামালের হিসাবের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল পাওয়া যায়নি, যা বড় ধরনের দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়। হাসপাতালে ভর্তিকৃত একাধিক রোগী অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে নার্সদের ব্যবহার খুবই খারাপ। ডাক্তাররাও সব সময় উপস্থিত থাকেন না। প্রয়োজনের সময় ডাক্তার নার্সদের খুজে পাওয়া যায় না। এছাড়া টয়লেট দূর্গন্ধময়, প্রায় সময়ই পানি থাকে না। রোগীদের প্রদান করা খাবার খুবই নিম্নমানের ও অপ্রতুল। মশা মাছির উপদ্রুপ অনেক বেশি। বিশেষ করে রোগীদের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো ও অপ্রয়োজনীয় খরচ চাপানো। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডাঃ রেজওয়ানা রশীদের কক্ষে নিজের নিয়োগকৃত পিএস এর জন্য আলাদা টেবিল বসিয়ে রোগীদের হয়রানি করা। এ বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক এনামুল হক বলেন, "আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালনা করেছি। হাসপাতালের ঔষধ সরবরাহ, আয় ব্যয় হিসাব, ষ্টক রেজিষ্ট্রার, খাদ্য সরবরাহ ও জরুরী বিভাগে চিকিৎসা শেষে রোগীদের নিকট হতে জোরপূর্বক টাকা গ্রহণসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিজেও এসব অনিয়মের দায় স্বীকার করেছেন। বিষয়টি আমরা প্রতিবেদন আকারে কমিশনে হন্তান্তর করব এবং তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনগণের অর্থ ও সরকারি সেবার স্বচ্ছতা নিশ্চিতে আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।" কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানা রশীদ তার ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বলেন, "আমি প্রতিটি দপ্তরের কাজ নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে ভাগ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। তাদের ব্যর্থতার কারণেই আজকে সকল কিছুর দায়ভার আমাকে নিতে হচ্ছে।" এই ঘটনাটি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দুদকের এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় জনসাধারণ এবং তারা আশা করছেন, এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মানে উন্নতি ঘটবে।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে