আখের রস থেকে হাতে তৈরি লাল চিনির প্রায় আড়াই শত বছরের ঐতিহ্য এবার পেল আন্তর্জাতিক পরিচিতি। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এই অনন্য পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ নিশ্চিত করেন যে, জিআই নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং সরকার নির্ধারিত ফি জমা দেওয়ার পর প্রশাসন আনুষ্ঠানিক সনদ সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, “লাল চিনির এই স্বীকৃতির মাধ্যমে শুধু অর্থনীতিতেই নয়, বরং দেশের বাইরে নতুন বাজারও সৃষ্টি হবে। কৃষকেরা এখন উৎপাদন আরও বাড়াতে উৎসাহিত হবেন।”
ফুলবাড়িয়ার বাক্তা, কালাদহ, রাধাকানাই, এনায়েতপুর ও রঘুনাথপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কৃষকেরা প্রজন্ম ধরে এই চিনি উৎপাদন করে আসছেন। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়, যার ৯০ শতাংশ দেশি জাত। ২০২৫ সালে এখানকার কৃষকেরা প্রায় ১০৮ কোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি করেছেন। প্রতি মণ চিনি গড়ে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
লাল চিনি তৈরির প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি হাতে করা। জমি থেকে আখ সংগ্রহ করে মাড়াই কলের সাহায্যে রস বের করা হয়। এরপর লোহার কড়াইয়ে কয়েক ধাপে জ্বাল দিয়ে রস ঘন করা হয়। শেষে কাঠের মুগুর দিয়ে বারবার নাড়া দিয়ে তৈরি হয় বাদামি রঙের মিহি দানার চিনি, যা দেখতে ধুলার মতো কিংবা ছোট ছোট গুটির আকারে হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ায় এর স্বাদে পাওয়া যায় আখের কাঁচা রসের ফ্লেভার, যা একে অনন্য করেছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, লাল চিনি তৈরি সম্পূর্ণ অর্গানিক এবং কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। এজন্য শরবত, পিঠা, মুড়ির মোয়া, খীরসহ বিভিন্ন মিষ্টান্নে ব্যবহৃত হয় এ চিনি। অনেক ক্রেতা এখন অনলাইনের মাধ্যমেও বিদেশে পাঠাচ্ছেন এটি।
ফুলবাড়িয়ার রাধাকানাই ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, “বাপ-দাদার আমল থেকেই লাল চিনি বানাই। কোনো ওষুধ দিই না। এই স্বীকৃতি পেয়ে আমরা আনন্দিত।” স্থানীয় পাইকার আবদুল মজিদ মনে করেন, “জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় চিনির চাহিদা বাড়বে এবং ব্যবসা আরও বিস্তৃত হবে।”
ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর ইসলাম জানান, জিআই স্বীকৃতি পাওয়া শুধু কৃষকদের জীবনে পরিবর্তন আনবে না, এটি পুরো অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।