মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিঁধে থাকা শতাধিক গুলির যন্ত্রণা আর অর্থের সংকটে সুচিকিৎসার অভাবে চিন্তায় দিশেহারা সিএনজি চালিত (টমটম চালক) দিনমজুর জসিম মিয়া (৩৫)। টমটম ছেড়ে ১৮ জুলাই থেকে নিয়মিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাথে আন্দোলন আংশ নেন জসিম। গত ৪ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মৌলভীবাজার শহরে অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে মিছিলে অংশ নেন জসিমও। চৌমুহনায় মিছিলকারী ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশ ও আওয়ামীলীসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জসিম এ হামলায় মারাত্মক আহত হন তবুও পিছু হটেননি সাহস নিয়ে পুলিশে বন্দুকের সামনে বুক পেতে পুলিশ ও ছাত্রলীগকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে করতে চাঁদানী ঘাটে ব্রীজের ওপর জসিমসহ কয়েকজন অবস্থান নেন সেখানে পুলিশ তাদের লক্ষ করে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট,কাদানি গ্যাস,সাইন্ড ঘেনেট যাবতীয় আগ্নেআস্র ব্যবহার করে। তখন জসিমের মাথাসহ সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় দুইশতাধিক গুলি লাগে। তখন ধোঁয়ার তেজসীতে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ও দুচোঁখে অন্ধকারে অঙ্গান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেখান থেকে রবিন, রাসেল ও দুইজন নারীসহ কয়েকজন সহযোগী তাকে তুলে নিয়ে স্থানীয় একটি ফার্মেসীতে নিয়ে যান সেখানে কয়েকটা গুলি বের করা হলেও এখনো মাথা হাত,পা, উরু ও গোপঙ্গে অনেক গুলি বিঁধে রয়েছে। চোঁখে ঝাপসা দেখেন, শ্বাসকষ্টও বেড়েছে সারা শরীলে ব্যাথার যন্ত্রণায় খেয়ে না খেয়ে শরীরিক অক্ষমতার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন জসিম। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছেনা। ৫বছরের প্রতিবন্দ্বী ছেলেকে নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছেন। জুলাই যোদ্ধা জসিম মিয়া রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের আদিনাবাদ গ্রামের বসির মিয়া ও মোক্তারুন্নেছার ছেলে। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে জসিম মিয়া বড়। মৌলভীবাজারের একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে দিনমজুরী করে সংসার ভালোভাবে চালাতেন। আন্দোলনের পর শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে বাসা বেধেছে শরীলে কর্মক্ষম হয়ে পড়েছেন তিনি। মা বাবা কান্না করেন নাতি ও পুত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আন্দোলনে আহত জসিম মিয়া বলেন, মৌলভীবাজার শহরে ৪ আগস্ট বিকেলে ছাত্রদের সাথে মিছিলে যোগ দেই। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে গুলি, টিয়ার শেল কাঁদনী গ্যাস ও রাবার বুলেট, সাইন্ড ঘেনেট, ব্যবহার করে পুলিশ। এতে আমিসহ মিছিলে থাকা ১৫/২০ জন আহত হই। এ সময় আমার মাথা, হাত-পা ও পিঠে বুকেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক গুলি লাগে। অঞ্জান হয়ে পড়ি রবিন নামে ব্যাক্তি সন্ধ্যা ৭টায় রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানেও চিকিৎসা না দিয়ে ডাক্তার যে ভাবে বাজে আচরন করে আমি ভয়ে সহপাঠীদের সহযোগিতায় বাড়ি চলে যাই। ৬ আগস্ট সাংবাদিক জুবায়ের ,রিফাত,ফজলু,লিটন ও নাসরিন প্রিয়ার সহযোগিতায় মৌলভীবাজার ২৫০ সয্যা হাসপাতালে ভর্তি হই পরের দিন ডাক্তার আমােেক সিলেট সিএমএইচ রেফার করেন। টাকার অভাবে তাৎক্ষণিক সিএমএইচ যেতে পারিনি তিন মাস পর গেলে সেখানেও গেজেট ভুক্ত না হওয়ায় সেখান থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, দুইমাস বাইশ দিন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। টমটম গাড়ি বিক্রি করে এক লাখ টাকা চিকিৎসা বাবতে খরছ হয়েছে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার সহযগীতা পাইনি। এখনো আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক গুলি রয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, সেগুলো বের করতে অপারেশন করতে হবে এতে অনেক ঝুঁকি আছে। উন্নত চিকিৎসা জন্য সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
জসিম মিয়ার ছোট বোন সাংবাদিক নাসরিন প্রিয়া বলেন, দিন মজুরের টাকা দিয়ে সংসার চালাতেন আন্দোলনে আহত হওয়ার পর কাজ করতে পারেন না। শরীরের ভিতর অনেকগুলো গুলি বয়ে চলতে হচ্ছে তাকে এতে দিন দিন শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গড়াচ্ছে। টাকার অভাবে ঠিকমত চিকিৎসা হচ্ছে না।