রংপুরের পীরগাছায় গবাদিপশুর শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে অজানা ভাইরাস রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত এক মাসে প্রায় দুই শতাধিক গরু ও ছাগলের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় হাতুড়ে চিকিৎসকরা রোগটি নির্নয় করতে পারছেন না। সামান্য জ্বর হলেই পরদিন মারা যাচ্ছে গবাদিপশু। পীরগাছা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ঔষধ কোম্পানীর উপ-টোকেন আর প্রতিনিধি নিয়ে প্রতিদিন ব্যস্ত থাকায় গবাদিপশুর খামারী পড়ছেন মহাবিপদে। অনেকে আবার রোগাক্রান্ত গরু-ছাগল স্থানীয় কসাইয়ের নিকট বিক্রি করে দিচ্ছেন পানির দামে। ফলে গোটা উপজেলাজুড়ে পবাদিপশু বিক্রি ও মারা যাওয়ার হিড়িক পড়েছে।
স্থানীয় খামারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে পীরগাছা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে অজানা একটি ভাইরাস রোগ। গরু-ছাগলের শরীরে অতিরিক্ত পরিমান তাপমাত্রা এবং হঠাৎ করে কমে যাওয়ার ফলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অসুস্থ্য হয়ে মারা যাচ্ছে পশুগুলো। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কার্যকর কোন ভূমিকা না থাকায় খামারী ও স্থানীয় পশু পালনকারী লোকজন হাতুড়ে চিকিৎসকের উপর নির্ভর করছেন। কিন্তু এসব হাতুড়ে চিকিৎসক কোন প্রকার প্রশিক্ষণ কিংবা সনদ ছাড়াই গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কয়েকজন ব্যক্তির সাথে কয়েকদিন ঘুরেই ইনজেকশন ফুরতে জানলেই তারা আলাদা হয়ে গবাদিপশুর চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে খোঁজ মিলছে না প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কারো।
সম্প্রতি ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় উপজেলার অনন্তরাম গ্রামের মোজাফফর মিয়ার ৩টি গরু, ৪টি ছাগল, খোকা মিয়ার, ৩টি গরু, ৩টি ছাগল, শাহালম মিয়ার একটি গরু, শফিকুল ইসলামের ২টি ছাগল, আমিরুল ইসলামের ২টি ছাগল, দশগা এলাকার খামারী মশিয়ার রহমানের একটি এবং অনন্তরাম সরকারটারী গ্রামের খুরশিদ আলমের একটি লক্ষাধিক টাকার গরু মারা যায়। এছাড়াও গোটা উপজেলাজুড়ে গরু-ছাগল মারা যাওয়ার কথা জানান খামারীরা। এতে করে চরম লোকসানে পড়ে গোয়াল খালি হয়ে পড়ছেন খামারীদের।
স্থানীয় অনন্তরাম গ্রামের বাসিন্দা মোজাফফর হোসেন বলেন, দুপুরে দেখলাম গরুর শরীরে জ্বর, স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করালাম। সকাল হতে হতে গরু মারা গেল। এভাবে ৩টি গরু আর ৩টি ছাগল মারা গেছে। ফলে বাকি গরুগুলো পানির দামে বিক্রি করে দিয়েছি। এখন গোয়াল শুন্য।
খামারী মশিয়ার রহমান বলেন, গরুর শরীরে জ্বর দেখে, ঔষধ নিয়ে এসেও গরু বাঁচাতে পারলাম না। লাখ টাকার গরু মারা গেল।
আরেক খামারী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিসের কাউকে ডাকলে সময় মত পাওয়া যায় না। তারা ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অফিসে গেলে কথা বলার সুযোগ নেই। কোম্পানীর লোক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার রুমে ভরা। একেক কোম্পানীর লোকজন আসছেন, উপ-টোকেন দিচ্ছেন, এটা নিয়ে কর্মকর্তার দিন পার হয়ে যাচ্ছে। তারা মাঠে যাবে কখন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: একরামুল হক মন্ডল বলেন, আমরা মাঠে যেতে পারিনা এটা সত্য। আমাদের জনবল কম। ইতিমধ্যে আমার ২টি টিম আজ থেকে মাঠে চিকিৎসা দিবে এবং ২টি টিম ভ্যাকসিন প্রয়োগে কাজ করবে। তারপরও আমরা গরু মারা যাবার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আসলে বোঝা যাবে কি রোগে গরু-ছাগল মারা যাচ্ছে।