চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। চাকসু নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণ হবে ১২ অক্টোবর।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনির উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে এ তফসিল ঘোষণা করেন। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়েছে ২৫ হাজার ৭৫২ জন ভোটারের তালিকা। আসন্ন সোমবার প্রকাশিত হবে খসড়া ভোটার তালিকা, যার বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারবেন শিক্ষার্থীরা ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টায় প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু হবে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে, যা চলবে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে জমা দিতে হবে মনোনয়নপত্র। যাচাই–বাছাই শেষে ২১ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হবে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা। প্রার্থীরা চাইলে ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন। এরপর আপত্তি ও নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া শেষে ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত, আর সেদিনই ভোটগণনা ও ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, চাকসু কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক জাফর উল্লাহ তালুকদার, ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম হোসেন হাবীবসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চাকসু নির্বাচন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। এর পর থেকে এ পর্যন্ত চাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০)। এরপর সংঘর্ষ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনুকূল পরিবেশ না থাকায় আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রসংগঠনগুলো নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন ও কর্মসূচি চালিয়ে আসছিল।
এদিকে চাকসুর গঠনতন্ত্র নিয়েও নানা বিতর্ক রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে এই ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের সরব হয়ে উঠতে দেখা যায়। চলতি বছরের ১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় সংশোধিত গঠনতন্ত্রকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল একে নারীবিদ্বেষী উল্লেখ করে সমালোচনা করেছে। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ কয়েকটি সংগঠনও গঠনতন্ত্র সংস্কার এবং চাকসুর কার্যক্রমে পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৯টি অনুষদ, ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার ৫০০। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আসন্ন চাকসু নির্বাচনকে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।