সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে যথাযথ খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা অত্যাবশ্যক। প্রত্যেক নাগরিকের খাদ্য চাহিদা পূরণ ও নিরাপদ খাদ্য তথা খাদ্যের মান নিশ্চিত করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সব আন্তর্জাতিক আইনেও খাদ্য চাহিদা পূরণের অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্র নাগরিকের জন্য খাদ্যসহ এসব মৌলিক জীবনোপকরণ সরবরাহ না করলেও প্রতিটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে, খাদ্যসহ মৌলিক জীবনোপকরণের সরবরাহ এবং মান নিশ্চিত রাখা। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ খাদ্য তথা, সুলভ মূল্যে প্রয়োজনীয় খাদ্যের উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ নিশ্চিত করার সাথে সাথে এর পুষ্টিমানসহ আনুষঙ্গিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল, নকল এবং ক্ষতিকর-বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার আমাদের জনস্বাস্থ্যকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। সর্বক্ষেত্রে ভেজাল ও মানহীন খাদ্য গ্রহণের ফলে কোটি কোটি মানুষ চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণ করছে। অনিরাপদ খাদ্য খেয়ে গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ডায়রিয়ার মতো পেটের পীড়া, লিভার-কিডনির জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বে যা কল্পনাও করা যায় না। বিশ্বের অনেক দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কঠোর আইন রয়েছে। অনেক দেশে খাদ্যে ভেজালের জন্য মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন কারাদ-ও দেওয়া হয়। আমাদের দেশে ভেজাল বা অনিরাপদ খাদ্যের জন্য যে শাস্তি দেওয়া হয়, তা আমলেই নিচ্ছে না কেউ। জরিমানা গুনে আবারও সেই পথেই পা বাড়াচ্ছে তারা। বিষয়টি নিয়ে সরকারকে আরও ভাবতে হবে। মানুষের জীবন হয়ে উঠছে ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততম। বদলাচ্ছে মানুষের লাইফস্টাইল। একই সঙ্গ বদলাচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। এক সময়ের ভেতো বাঙালি এখন নানা ধরনের খাদ্য সংযোজন করছে খাদ্য তালিকায়। জীবন যখন যেমন, তেমনি ধারায় অভ্যস্ত হতে হচ্ছে সবাইকে। রেস্তোরাঁ এবং পর্যায়ক্রম স্ট্রিট ফুডগুলোতে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা বাধাগ্রস্ত হবে। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি নজর দিতে হবে নিরাপদ খাদ্যের দিকে। খাদ্য উৎপাদনে সঠিক জ্ঞান ও অসাধুতা এবং বাজারজাতকরণ ও বিপণনে দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য যোগানে অনেক পিছিয়ে। বর্তমান সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে। দেশের সকল মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারলে সুস্থ জাতি গঠন সম্ভব হবে না।