নাগেশ্বরীতে বড় ভাইয়ের নামে চাঁদাবাজীর অভিযোগ ছোট ভাইয়ের

এফএনএস (হাফিজুর রহমান হৃদয়; নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম) :
| আপডেট: ২৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম | প্রকাশ: ২৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম
নাগেশ্বরীতে বড় ভাইয়ের নামে চাঁদাবাজীর অভিযোগ ছোট ভাইয়ের

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটায় ভিটেমাটি থেকে তাড়াতে বড় ভাইয়ের নামে জেলা পুলিশ বরাবর চাঁদাবাজীর মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে ছোট ভাই। শুধু অভিযোগ নয়, বিচার পাইয়ে দিতে যে গ্রামবাসীরা সহযোগিতা করতে আশ্বাস দিয়েছিলো তাদের নামে আদালতে আরেকটি চাঁদাবাজীর মামলাও দেয়া হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কচাকাটা থানার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের শিংগিমারী গ্রামে। গ্রামের বাসিন্দা নুর আলম ছকমাল্লি, আব্দুর রহিম মিলে গোপনে বয়বৃদ্ধ বাবা বছির উদ্দিনের কাছে ব্রম্মত্তর মৌজার সমুদয় জমি (২.১১একর) তাদের নামে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে লিখে নেন। এসময় তাদের মা ছকিনা বেগম সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃদ্ধ বছির উদ্দিনের বড় স্ত্রীর  দুই ছেলে  শাহজামাল ও শাহালম। এদের মধ্যে বড় ছেলে শাহাজামালের নামে তার প্রথম স্ত্রীর বেচে থাকা কালীন কিছু জমি কিনে দেন। অপরদিকে  ছয় বছর আগে অপর ছেলে শাহালমকে মৌখিকভাবে বাড়ির ভিটা এবং কিছু জমি চাষাবাদের জন্য দেন বছির উদ্দিন। কিন্তু শাহালমকে মৌখিক ভাবে দেয়া বাড়ির ভিটা ও কৃষি জমি বিমাতা ভাইদের  লিখে নেয়া সমুদয় জমির ভিতরে পড়ে যায়। এই জমি ও বাড়ি থেকে অসহায় শাহালমকে বিতাড়িত করতে নানা অপচেষ্টা করে বিমাতা ছোট ভাই নুর আলম ছকমাল্লি ও আব্দুর রহিম। সবশেষে শাহালমকে সহযোগিতাকারী বড় ভাই শাহ-জামালসহ যে গ্রামবাসীরা ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলো তাদের নামেও চাঁদাবাজীর মামলা ও অভিযোগে অন্তর্ভূক্ত করেছে ছকমাল্লি। এদিকে শাহ-জামালসহ মামলায় অন্তর্ভূক্ত অন্যান্য গ্রামবাসীকে হেনেস্থা করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছে ধুরন্ধর ছকমাল্লি।

জানা যায়, চাঁদাবাজীর অভিযোগ এনে সম্পত্তি বঞ্চিত মাহালমের বড় ভাই শাহা-জামাল, গ্রামবাসী মনির উদ্দিন, নূর ইসলাম, নুরজামাল, নওশাদ আলীসহ ৮জনকে আসামী করে  ১৯ আগষ্ট ২০২৫ তারিখে কুড়িগ্রাম আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করে ছকমাল্লি। এছড়া ওই আটজনকে রেখে সাবেক ইউপি সদস্য সৈফুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে পুলিশ সুপার বরাবর চাঁদাবাজীর একটি অভিযোগ করেন তিনি। এ মামলা করায় অসহায় হয়ে পড়েছে সম্পত্তি বঞ্চিত শাহালম। একদিকে বাপের সমুদয় জমি থেকে তাকে বঞ্চিত করেছে অপরদিকে তাকে সহযোগিতাকারী বড়ভাইসহ অন্যান্যদের নামে চাঁদাবাজীর মিথ্যা মামলা দেয়ায় তার  বাড়ি ঘর উচ্ছেদের পায়তারা করছে বিমাতা ভাইয়েরা। তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে অথৈ সাগড়ে পড়েছে শাহালম।

শাহালম বলেন, ছোট মা ও তার দুই ছেলে বাবার যেটুকু জমি ছিলো তা গোপনে ভুলিয়ে ভালিয়ে লিখে নিয়েছে। আমার বাবা যেটুকু জমি আমাকে ভোগ করতে দিয়েছিলো সেগুলোও তারা লিখে নিয়েছে। আমি এখন নিঃস্ব। আমার যাবার কোন স্থান নেই। জমি দখল নিতে ও আমার বাড়িঘর উচ্ছেদ করতে মিথ্যা মামলা ও অপচেষ্টা চালাচ্ছে ভাইয়েরা। জমিজমার ব্যাপারে যারা আমার হয়ে কথা বলেছেন তাদেরও নাম মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। 

মামলায় অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, ছকমাল্লিরা আমাদের আত্মীয়। তারা তাদের শতবর্ষি বাবাকে চিকিৎসার কথা বলে সাবরেজিষ্টার অফিসে নিয়ে গিয়ে সব জমি লিখে নিয়েছে। এতে তাদের বড় মায়ের মেঝো ছেলে শাহালম একবারে নিঃস্ব হয়েছেন। তার নামে এক ফোটা জমিও নেই। তাকে ঠকানো হয়েছে। শাহালম আমাদের সরানপন্ন হলে। এবিষয় নিয়ে গ্রামে বৈঠক বসে। জমি লিখে নেয়া ভাইয়েরা কিছু জমি শাহালমকে ফেরত দিতে সম্মত হয়। কিন্তু কিছুদিন পর স্থানীয় দুই দেওয়ানীর পরামর্শে তারা তা অস্বীকার করে আমাদের নামেই ৫লাখ টাকা চাঁদা দাবীর মামলা করে। তাদের মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। শাহালমকে তাড়াতে এ ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।

জমি লিখে নেয়া বিমাতা ভাই নুর-আলম ওরফে ছকমাল্লি জানান, আমাদের বাবা আমাদের খুশি হয়ে জমি লিখে দিয়েছেন। সেই জমি দখলে নিতে গেলে তারা আমাদের হুমকি ধামকি দেন এবং দেওয়ানীরা চাঁদা দাবী করে বলে আমি মামলা করেছি। বড় ভাইকে জমি থেকে বঞ্চিত করেছেন কেন এমন প্রশ্নে কোন সদত্তুর দিতে পারেনি তিনি। 

কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহা আলম জানান, এবিষয়ে এসপি অফিস থেকে কোন নথী আসেনি আমাদের কাছে। তবে তাদের ভাইদের মাঝে জমি নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হলে ৯৯৯ ফোন পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে