নীলফামারী জেলার ৬টি উপজেলায় এক সময় আখের চাষ ছিল জনপ্রিয়। প্রতিটি উপজেলায় কোথাও না কোথাও হত আখের চাষ। সে সময় অনেকের বাড়ীতে ছিল আখ মাড়াই কল। অনেক চাষী নিজেরাই আখের গুড় তৈরি করতো। আখ কাটার পর ওই জমিতেই আখ কল বসিয়ে তা মাড়াই করা হত। আবার পরক্ষণই টিনের ড্রামে আখের রস আগুনে জ্বাল দেয়া হত। জ্বাল দেয়ার এক সময় টগবগ করা আখের রস ঢালা হত মাটির হাঁড়িতে। সেখানে কিছু সময় জমাটবদ্ধ হয়ে তৈরি হত মজাদার খাঁটি আখের গুড়। তারপর সেগুলো গ্রাম বা শহরের হাটে তা বিক্রি করা হত। তাছাড়া পাইকাররা এসেও নিয়ে যেত।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের মিয়া বাড়ি গ্রাম। এ গ্রামের মরহুম রোস্তম আলি মিয়া ও মরহুম সফি উদ্দিন মিয়া। উভয়ের ছিল আখের কল। আখ চাষীরা গুড় তৈরি করতে কল ভাড়ায় নিত। এখন ওই পরিবারে আর নেই আখ মাড়াই কল। তবে এখনো কলের বিভিন্ন যত্রাংশ পড়ে।থাকতে দেখা যায়।
এখন আখের চাষ আগের মত তেমন নেই। ফলে আখ মাড়াই কল আর চোখে তেমন পড়ে না।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের উত্তর সিঙ্গেরগাড়ী গ্রাম। এ গ্রামের বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা কমলা কান্ত রায়। তার বয়স চলছে ৭৭ বছর। ২৮ আগস্ট আখ চাষ নিয়ে তার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান,আমি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা। সরকারি ভাতাসহ বছরে ৪টি বোনাস পেয়ে থাকি। তিনি প্রতি বছর আখ চাষ করেন। এবারও করেছেন ১২ শতক জমিতে চাষ। ফলনও হয়েছে বাম্পার। এখন পর্যন্ত কোন রোগবালাই আক্রমন করেনি।
তিনি জানান,আখ চাষ লাভজনক। এটির চারা রোপন করতে হয় পৌষ মাসে। রোপনের পর যত্ন করতে হয় ৯ মাস। তারপর আখ কেটে বিক্রি করা হয়। তবে বিক্রির জন্য কোথাও যেতে হয় না। জমিতেই আখ বিক্রি হয়ে যায়। আমি ১২ শতক জমিতে আখ চাষ করেছি। এতে আমার ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার টাকা। আশা করি আখ বিক্রি হবে ২০ হাজার টাকা।
ওই গ্রামের আখ চাষী আম গোপাল মোহন্ত বলেন,তিনি এবার ১৮ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন। ওই জমির আখ তিনি বিক্রি করেছেন ৪২ হাজার টাকায়। এতে খরচ বাদে তার লাভ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা।
পাশের আখ চাষী রোহিদাস চন্দ রায় (৫৫) ও কেমার রায় বলেন,আমাদের এ গ্রামে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন লোক আখ চাষ করে। লোকসান না হওয়ায় প্রতি বছর তারা আখ চাষ করেন।
নীলফামারী।কৃষি অফিস সুত্র জানায়, এখন বেশ কয়েক জাতের আখ চাষ হচ্ছে। তার মধ্যে -৪১ জাতের আখ গুড় উৎপাদনের জন্য উপযোগি। প্রতি ১০০ কেজি আখ থেকে ১০ থেকে ১২ কেজি গুড় উৎপাদন সম্ভব।
অপরপাশে ফিলিপাইনের ব্ল্যাক রুবি জাতের আখ ইতোমধ্যে নীলফামারী জেলার কয়েকটি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এ আখ নরম,সুস্বাদু ও রসালো। এটিকে ফিলিপাইনে কালো আখ বলা হয় আখ চাষীরা জমিতে আখের দাম কমে বিক্রি করলেও বাজারে বেশি দামে তা বিক্রি করা হচ্ছে।
আখ চাষি কমলা কান্ত রায় বলেন,আমরা জমিতেই আখ বিক্রি করে থাকি । তাতে একটি আখের দাম পড়ে ৫ টাকা। আর ওই আখ শহরে বা গ্রামে বিক্রি করা হয় ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা দরে। চাষিদের চেয়ে প্রায় ৪ গুন লাভ করে পাইকাররা। আর যারা হাতে কেটে বিক্রি করে তারা আরও বেশি লাভ করে।