রাজশাহীর তানোরে মহানগর ক্লিনিকে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ভুল অস্ত্রোপচারে রোগীর কিডনি ক্ষতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রোগী রোজিনা খাতুন (৩৫) বাদি হয়ে ক্লিনিক পরিচালক মোসা. কামরুন নাহার স্মৃতি (৪৫), চিকিৎসক মো. ফজলে রাব্বি ও ক্লিনিক ম্যানেজার মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে তানোর থানায় গত ৯ আগস্ট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৩ আগস্ট ক্লিনিক মালিক হেলাল উদ্দিন আপোষের জন্য থানায় বসার আয়োজন করেন। কিন্তু চিকিৎসা খরচের ২৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকায় মিমাংসা করার দাবি জানান হেলাল। কিন্তু এতে রোজিনা রাজি না হয়ে সেখানে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। ফলে আপোষ হয়নি। তবে, শুক্রবার ২৯ আগস্ট বিকেলে আবারও বসে অভিযোগের বিষয়ে সমাধানের কথা রয়েছে বলে থানার এসআই মাসুদ এ প্রতিবেদকে নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে রোগী রোজিনা খাতুন রাজশাহী ল্যাব কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আকচা গ্রামের জাহেরুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুন (৩৫) এর ১১ জুলাই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের একটি অপারেশন করা হয় তানোর পৌর এলাকার আমশো মহল্লায় অবস্থিত মহানগর ক্লিনিকে। কিন্তু অপারেশনের ২-৩ দিন পরে প্রচন্ড জ্বর আসে। এঅবস্থায় স্বাভাবিক ভাবে বিছানা থেকে উঠতে না পারলেও পরিবারের সহযোগিতায় পুনরায় তানোর মহানগর ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় রোজিনাকে। তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু জ্বরের জন্য সাপোজিডার দিতে বলে। পরে তার অবস্থা আরো গুরুত্বর হয়ে পড়লে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েনেয়া হয়। পরবর্তীতে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তারের কথা মতো বিভিন্ন ধরণের টেষ্ট করে দেখা যায় তানোর মহানগর ক্লিনিকের অপারেশন সম্পূর্ণ ভুল ছিল। একারণে কিডনি ক্ষতির আশঙ্কা হয়েছে বলে রাজশাহী ল্যাব কেয়ার হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বিষয়টি অবগত করেন। ভুক্তভোগি রোজিনা জানান, তানোর হাসপাতালের কর্তব্য চিকিৎসকদের কথা শোনে রাজশাহী ল্যাব কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে পুনরায় অপারেশন করান তিনি। ওই অপারেশনের সময় দেখা যায় তানোর মহানগর ক্লিনিক ভুল চিকিৎসার পাশাপাশি তার কিডনির ক্ষতি হয়েছে। এজন্য নতুন করে তার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এহেন ভুল অপারেশনে তার ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে থানায় এক অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রাজশাহী ল্যাব কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে আরও ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই খরচের ব্যাপারে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেননি। শুধু মহানগর ক্লিনিকে খরচের টাকা দাবি করা হয়। তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মহানগর ক্লিনিকে তার মতো ভুল অপারেশনে ইতিপূর্বেও বহু রোগি সমস্যায় ভুগছেন। এমনকি ভুল চিৎিসার কারণে অনেকে মারাও গেছেন। এমনই প্রমান রয়েছে অহরহ, এরমধ্যে সম্প্রতি ৭ জুলাই প্রসব বেদনা নিয়ে তানোর মহানগর ক্লিনিকে ভর্তি হন প্রসূতি সুর্মিলা। পরে ভূল চিকিৎসায় ১৪ জুলাই শনিবার সকালে রামেক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এঘটনা নিয়ে নিহতের পরিবার ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন। কিন্তু পরিবারের মুখ বন্ধ রাখতে তালন্দ ইউপির এক মেম্বারের মাধ্যমে ১৫ দিন ধরে রফাদফা করার চেষ্টা করা হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিতে দেননি ইউপি মেম্বার। পরে কিন্তু রফাদফার মাধ্যমে সমাধান করা হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে তানোর মহানগর ক্লিনিকে প্রোপাইটার হেলাল উদ্দিন বলেন, রোগীকে সঠিক চিকিৎসাই দেওয়া হয়েছে। ভুল অপারেশন হলে দুয়েক দিনের মধ্যেই জটিলতা দেখা দিত। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করার কারণে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বসে সমাধানের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু প্রসূতি সুর্মিলার মৃত্যু অন্য কারণে হয়েছে বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি। এনিয়ে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাসদাকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সালমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এব্যাপারে রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এস.আই.এম রাজিউল করিম বলেন, এমন ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপা গ্রহণ করা হবে। তবে, আমার জানামতে এই ক্লিনিকের লাইসেন্স এখানো নবায়ন করা হয়নি। অভিযোগের সত্যতা পেলে লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ করা হবে। ই/তা