শেরপুরের ১৬ লাখ মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে জেলা সদরের ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালটি ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর প্রয়োজনীয় জনবল ছাড়াই ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে উন্নীত করা হয়। প্রায় ৭ বছর অতিবাহিত হলেও হাসপাতালটির শূন্য পদে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও বিনামূল্যের ওষুধ সংকট, দালালদের দৌরাত্ব, যন্ত্রপাতি বিকল ও কৃর্তপক্ষের মানসম্মত সেবা না দেয়ায় যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই জেলার মানুষ। জেলার ৫টি উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার দুইটি এবং কুড়িগ্রাম জেলার আরো দুইটি উপজেলা সহ মোট ৯টি উপজেলার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন এই হাসপাতালে। ফলে হাসপাতালে এসে কাংখিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
শেরপুর সদর হাসপাতাল সূত্রের তথ্যমতে, হাসপাতালে ৫৮ জন চিকিৎসকের পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৩০ জন। এরমধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আছেন দুইজন। বাকি চিকিৎসকের পদই শূন্য। চিকিৎসকদের ৫৮ পদের মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট ১০ টির নয়টি শূন্য, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১৩টির মধ্যে ৮টি, আর এস পদে একটির মধ্যে ১টি এবং অ্যানেসথেটিস্ট তিনটি পদের মধ্যে একটি শূন্য। এছাড়া একটি রেডিওলজিস্ট পদের মধ্যে একটিই শূন্য, চারটি মেডিকেল অফিসার পদের মধ্যে একটি, রেজিস্ট্রার ৯টি পদের মধ্যে পাচটি পদই শূন্য রয়েছে। এদিকে ৮৭ জন নার্সের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৭৮ জন। বাকি পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে । জনবলের অভাবে শেরপুর জেলা হাসপাতালের আইসিইউ ও সিসিইউ ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না। আটতলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে ।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ধারণক্ষমতার প্রায় আড়াই থেকে তিনগুন রোগী ভর্তি আছেন হাসপাতালটিতে। রোগীদের চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা । অন্যদিকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের জন্য স্বল্প মূল্যে সরকারিভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালে সব পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। রয়েছে ওষুধের সংকটও ।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ঝিনাইগাতীর মিনার জানান, হাসপাতালে চিকিৎসক ঠিকমতো আসে না। এতে আমরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এছাড়া সব পরীক্ষা নিরীক্ষা যদি হাসপাতালেই করাতে পারতাম তাহলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হতো।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. কোহিনুর জাহান শ্যামলী জানান, যে পরিমান রোগীর চাপ আমাদের সামলাতে হচ্ছে তাতে করে আমরা সত্যিই ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। যে বিভাগে যত জন রোগী থাকার কথা তার কয়েকগুণ ভর্তি হচ্ছে অথচ চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই কম।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা.আসাদুজ্জামান জানান, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও চিকিৎসকসহ বরাদ্দ ১০০ শয্যার হাসপাতালের তাই ওষুধ,খাদ্য, স্টাফ সবকিছু সীমিত ।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাসলিম আরিফ জানান, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসক ও নার্স সংকট। সমপ্রতি এই সংকট জটিল আকার ধারণ করেছে। রোগীর ভর্তি সংখ্যা যে হারে বেড়ে চলছে সে হারে আমাদের জনবল সংকট দূর করা হয়নি। জনবল সংকট কাটিয়ে উঠলে আমরা উন্নত সেবা দিতে পারবো।
এ বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহিন জানান, সমপ্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন। আমরা এখনও ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করার কোড পাইনি। কোডটি পেলেই জনবল নিয়োগ হবে।