রাজশাহীর তানোর উপজেলা এখন বারোমাস আমের মওসুম হিসাবে পরিচিত লাভ করেছে। একারণে এঅঞ্চলে মিলছে বারোমাসি আম। কিন্তু বাংলা পূঞ্জিকা মাসের হিসাব অনুয়ায়ী দেশে আমের মৌসুম শেষ হয়েছে। কিন্ত মওসুম শেষ হলে এ সময়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে চিত্রটি আলাদা। আসলে যে কেউ বলবে আগামী মাসেই হয়তো আমের মৌসুম শুরু হচ্ছে। কারণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রাজশাহীর তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ অঞ্চলে অনেক নতুন আমের বাগান গড়ে উঠেছে। কম বেশি সব বাগানের থোকায় থোকায় ঝুলছে সুস্বাদু কার্টিমন আম।
রোববার সকালে বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা হতে আমনুরা ও আইড়া মোড় হতে কলমা সড়কের আশে পাশে দেখা গেছে অনেক আমবাগান। এসব বাগানে ছোট ছোট গাছে ঝুলছে আম। পুরো বাগানের আম দেখে সড়ক দিয়ে চলাচল রত পথচারীদের নজর কাড়ছে এ অসময়ের আমবাগান দেখে।
কৃষিবিদরা বলছেন, কার্টিমন আম আসলে থাইল্যান্ড থেকে আনা একটি প্রজাতি। একে সুইট কার্টিমনও বলে। বাণিজ্যিকভাবে চাষ বাড়ছে কার্টিমন নামের বারোমাসি আমের। দেশিয় আমের মওসুমের বাইরে বছরজুড়ে এই আম উৎপাদিত হয় বলে স্থানীয় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দাম ও ফলন দুইটায় পাই চাষিরা। তাই এ আম চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের চাষিদের।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউপির একান্নপুর (বালকাপাড়া) গ্রামের কৃষক তাবারক হোসেন জানান, ছয় বছর আগে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে গোপাল ভোগ নেংড়া ও খিরসা জাতের আমবাগার গড়ে তোলেন। কিন্ত এ জাতের আমবাগান গড়ে তুলতে যে পরিমান খরচ হয় তাতে পাঁচ বছর আম চাষ করে লাভ তো দুরের কথা খরচ টুকু উঠে আসবে না। তাই সে জাতের আমগাছ কেটে তিনি ২৫ বিঘা জমিতে কার্টিমন জাতে প্রায় দুই হাজার ৫০০ আম গাছের বাগার করেছেন। চলতি বছর তার বাগানে যে পরিমাণ কার্টিমন আম ধরেছে তা বিক্রি করলে বেশির ভাগ টাকা এক বছরেই উঠে আসবে বলে আশা করছেন তিনি।
উপজেলার তোলোপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষিবিদ মামুনুর রশিদ মামুন জানান, পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা পাওয়ার পর কার্টিমন আম চাষ নিয়ে প্রচারণা চালানো হয়। দেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারে এর চারা উৎপাদন করা হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন নার্সারির মাধ্যমে এই আমগাছ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় চাষিরা বেশি ঝুকেছে কার্টিমন আম চাষে।
এ কৃষিবিদ আরো জানান, কার্টিমন আমচাষে বাড়তি যত্ন নিতে হয়। আম মূলত শুষ্ক আবহাওয়ার একটা ফসল। দেশি আমগাছের তুলনায় কার্টিমন আম গাছের যত্ন বেশ আলাদা। মওসুমের বাইরে যদি আম পেতে হয় তাহলে, আমের মওসুমের সময় যে মুকুল বা গুটি আসে সেটি ভেঙ্গে দিতে হয়। একে বলা হয় প্রুনিং। এটা কার্টিমন আম চাষের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ধাপ।
এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমনুরা হতে নাচোল আড্ডা আর নওগাঁর পোরশা ও নিয়ামতপুর এলাকার মুল সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অসংখ্যা ছোটবড় কার্টিমন জাতের আমবাগান চোখে পড়ে। সম্প্রতি নাচোল উপজেলার লক্ষিপুর মোড়ের পাশে একটি বাগান রয়েছে। সেখানে গিয়ে কথা হয় বাগারে মালিক নুর ইসলাম নামের এক চাষির সাথে। তিনি জানান, আট বছর আগে সাত বিঘা জমিতে কার্টিমন আম চাষ শুরু করেন তিনি। এরপর তার আম বাগানের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে তার সাতটি বাগানে ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজারের মতো আমগাছ রয়েছে। সব গাছে আম ধরেছে। বর্তমানে বাজারে পাইকারি পর্যায়েই প্রতি কেজি আম ২০০ টাকা থেকে শুর করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বছরে দুই বার তোলা যায় কার্টিমন আম। যা বছরে এ আম বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা আয় হয় তার। ই/তা