কক্সবাজারের আকাশপথে খুলছে নতুন দুয়ার। অক্টোবরে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে চালু হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ের কাজ। এগিয়ে চলছে আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল ভবনের নির্মাণও। যাত্রী আকর্ষণে টিকিটের মূল্য থাকবে নাগালের মধ্যে-এমনটিই জানাচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজার। আর সেই সমুদ্র শহরেই এবার আকাশপথে খুলছে আন্তর্জাতিক সংযোগের নতুন দুয়ার। সম্প্রসারিত হয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে। দৈর্ঘ্য এখন ১০,৭০০ ফুট-যা দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে। এর ফলে বড় আকারের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও এখন থেকে অবতরণ করতে পারবে এই বন্দরে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর এম. মোশাররফ হোসেন জানান, বর্ধিত অংশের রানওয়ের কাজ শেষ হয়েছে। অন্যান্য কিছু কাজ রয়েছে, তাও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমার আগেই এ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
কক্সবাজার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মঈনুদ্দিন জানান, আন্তর্জাতিক টার্মিনালের নিচতলার কাজ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে। অক্টোবরের মাঝামাঝি ফ্লাইট চালুর সময় যাত্রীরা এই অংশ ব্যবহার করতে পারবেন।
এদিকে বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে রূপ দিতে দ্রুতগতিতে চলছে আধুনিক যাত্রী টার্মিনাল ভবনের নির্মাণ। ৮১ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন। বাকি অংশ শেষ করতে কাজ চলছে দিনরাত। আর পুরো কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। মাঝে মাঝে কাজের অগ্রগতি দেখতে ছুটেও আসছেন তারা।
সম্প্রতি কক্সবাজার সফরকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, আমরা কাঙ্খিত সময় অনুযায়ী কক্সবাজার বিমানবন্দরে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক বিমান অপারেশন শুরু করব। এর মাধ্যমে আয়ের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। যাত্রী আকর্ষণের জন্য শুরুতে স্বল্পমূল্যে টিকিট দেওয়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। প্রথমে একটি ফ্লাইট দিয়ে শুরু করব, পরে ধীরে ধীরে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য যা যা করার দরকার সবকিছু করছে সরকার। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, রানওয়ে সম্প্রসারণের ফলে এর দৈর্ঘ্য অনেক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বড় আকারের বিমানকে অবতরণ ও উড্ডয়নের সুযোগ দিতে বড় রানওয়ে প্রয়োজন হয়। এই সম্প্রসারিত রানওয়ের মাধ্যমে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। তবে পুরো রানওয়ে ধাপে ধাপে ব্যবহার করা হবে। ভবিষ্যতে বড় বড় বিমান কক্সবাজারে অবতরণ করবে-এই লক্ষ্যেই সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কেও তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এখনো প্রক্রিয়াধীন। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা প্রয়োজন, সরকার সে অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বদলে যাবে কক্সবাজারের চেহারা-এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
পর্যটন ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা শুরু হবে-এটা কক্সবাজারবাসীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি আনন্দের খবর। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে আমূল পরিবর্তন আসবে এবং স্থানীয় সকল ব্যবসায়ী এর সুফল ভোগ করবেন। সেইসঙ্গে কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের আংশিক এলাকার প্রবাসীরাও সরাসরি এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে, যা যাতায়াতকে অনেক সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলবে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হওয়া নিঃসন্দেহে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে একটি আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে। শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয়, বরং জাতীয় অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আন্তর্জাতিক ট্রানজিট ফ্লাইটগুলোর জন্য এখানে রিফুয়েলিংয়ের সুযোগ থাকায় বিদেশি মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি সরকার রাজস্ব আয়ও করতে পারবে।
সমুদ্র আর আকাশের সংযোগে তৈরি হচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। কক্সবাজার শুধু পর্যটন নয়, হয়ে উঠতে যাচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম কেন্দ্র।