চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবির) এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে চবি শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৩০ জন শিক্ষার্থীকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোববার ভোররাত থেকে এখন পর্যন্ত থেমে থেমে এই সংঘর্ষ চলছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের পরীক্ষাও ছিল। এজন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’ এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নাম্বার গেট সংলগ্ন শাহাবুদ্দীন ভবনে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের (২০২৪-২৫ সেশন) সাফিয়া খাতুন নামের ওই ছাত্রী উল্লেখিত ভবনে ভাড়া থাকেন। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে ওই চবি ছাত্রী বাসায় প্রবেশ করতে গেলে ভবনের দারোয়ান তাকে মারধর করেন। পরে খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে সে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া করলে স্থানীয়রা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। এসময় আশপাশের স্থানীয় লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয় যে চবি শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এতে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়ে যায়। এ ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. কোরবান আলী ও নাজমুল হোসাইন পুলিশের সঙ্গে রাত পৌনে ১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে স্থানীয়দের দখলে থাকায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নাম্বার রাস্তায় প্রবেশ করতে পারেননি এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে ক্যাম্পাস এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু রোববার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বেশ কিছু স্থানীয় লোকজন আবারো ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদের কেউ কেউ দাবি করছেন, শিক্ষার্থীদের উপর হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা সেখানে পূর্ব থেকেই জড়ো হয়েছিল।
সর্বশেষ সেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ১৪৪ দ্বারা জারি করেন। তবে পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
চবির মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. টিপু সুলতান সাংবাদিকদের জানান, আমি আগে কখনো একই সঙ্গে এত শিক্ষার্থীকে আহতাবস্থায় চিকিৎসা নিতে চবি হাসপাতালে আসতে দেখিনি। অনেককে সেন্টারে চিকিৎসা দিয়েছি এবং গুরুতর আহত বেশ কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভির হায়দার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে- এটা দুঃখজনক। আমরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।