চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের রেশ : আজও স্থবির একাডেমিক কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:০৬ এএম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের রেশ : আজও স্থবির একাডেমিক কার্যক্রম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় জোবরা গ্রামবাসীর দফায় দফায় সংঘর্ষের পর টানা দ্বিতীয় দিন বন্ধ রয়েছে ক্লাস ও পরীক্ষা। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পূর্বনির্ধারিত নিয়োগ পরীক্ষা চলছে স্বাভাবিক নিয়মে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় সোমবারও (১ সেপ্টেম্বর) ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউটের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার ৫৫০ শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে সাধারণত মুখর থাকে ক্যাম্পাস, কিন্তু সংঘর্ষ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস এখন অনেকটাই ফাঁকা। সকাল থেকে কেবলমাত্র শিক্ষকদের বাস ও শাটল ট্রেন স্বাভাবিক সূচি অনুযায়ী চলাচল করছে।

শনিবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী ভাড়া বাসায় প্রবেশের সময় দারোয়ান তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে স্থানীয় লোকজন ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং রাত থেকে পরদিন রোববার (৩১ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে।

শিক্ষার্থীদের হাতে রড, লাঠি ও পাথর থাকলেও স্থানীয়দের হাতে ছিল রামদা, রড ও পাইপ। ক্যাম্পাসসংলগ্ন জোবরা গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত কয়েকশ’ মানুষ আহত হয়েছেন। প্রথম আলো জানিয়েছে, শুধু শনিবার রাতেই অন্তত ৭০ জন শিক্ষার্থী আহত হন, যাদের মধ্যে অনেককে কুপিয়ে জখম করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ফারহানা ইয়াসমিন জানান, শনিবার রাত থেকে রোববার রাত পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন শতাধিক, আর অন্তত ১০ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। বিকেল থেকে সেনা ও যৌথবাহিনী টহল দিলেও ক্যাম্পাস ও আশপাশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করছে বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) থেকে ক্যাম্পাসে ক্লাস ও পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবে শুরু হতে পারে।

তবে সোমবার সকাল পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কাওছার মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত কাউকে আটকও করা হয়নি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজিউর রহমান রাজু ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। রাজিউরকে সংঘর্ষ চলাকালে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে সহপাঠীরা অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে নাইমুল গুরুতর জখম হন রোববার দুপুরে ফের শুরু হওয়া সংঘর্ষে।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণত যে স্থানগুলোতে দিনভর শিক্ষার্থীদের ভিড় থাকে—সেসব জায়গা এখন প্রায় জনশূন্য। স্বাভাবিক সময়ে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর শহীদ মিনার, গোলচত্বর বা সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এখন নিস্তব্ধ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে