জুলাই গণহত্যা মামলা : শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:২৮ এএম
জুলাই গণহত্যা মামলা : শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ

জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই সাক্ষ্যগ্রহণ করছেন।

গত ২৬ আগস্ট নবম দিনের শুনানিতে পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মফিজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মনিরুল ইসলাম, একই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোস্তাক আহমেদ, ফেনীর ব্যবসায়ী আহত নাসির উদ্দিন এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের নানা মো. সাঈদুর রহমান। এ পর্যন্ত মোট ২৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড হয়েছে।

জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন তাঁদের জেরা করেন। অন্যদিকে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর মঈনুল করিম এবং আবদুস সাত্তার পালোয়ান।

২৫ আগস্ট অষ্টম দিনে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী, একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা, শহীদ মারুফ হোসেনের বাবা মোহাম্মদ ইদ্রিস, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার এবং শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেলের মা হোসনে আরা বেগম সাক্ষ্য দেন।

২৪ আগস্ট সপ্তম দিনে রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলাম, ওই বিভাগের অফিস সহকারী মো. গিয়াস উদ্দিন এবং কুষ্টিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম সাক্ষ্য দেন।

এর আগে ২০ আগস্ট ষষ্ঠ দিনে জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন, ইবনে সিনা হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসানুল বান্না এবং শহীদ শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল সাক্ষ্য দেন।

১৮ আগস্ট পঞ্চম দিনে শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল ও রাজশাহীর প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন সাক্ষ্য দেন। এর একদিন আগে ১৭ আগস্ট সাক্ষ্য দেন চারজন— সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম।

৬ আগস্ট সাক্ষ্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী রিনা মুর্মু ও সাংবাদিক একেএম মঈনুল হক। ৪ আগস্ট পঙ্গু হওয়া শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান এবং চোখ হারানো দিনমজুর পারভীন জবানবন্দি দেন। মামলার প্রথম সাক্ষ্য দেন ৩ আগস্ট আন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ, যিনি নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকেও আসামি করা হয়েছিল। তবে তিনি নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। তাঁর উপস্থিতিতেই সাক্ষীরা আদালতে জবানবন্দি দিচ্ছেন।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন তাঁদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে।

মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রের মোট আকার আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠা। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ রয়েছে দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায়। মোট ৮১ জন সাক্ষীকে হাজির করার তালিকা দিয়েছে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে