গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি’র দুটি গ্রুপের মধ্যে চলমান বিরোধের জেরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। দলটির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচী একই স্থানে পাল্টাপাল্টিভাবে ডাকায় প্রশাসন এই পদক্ষেপ নেয়। এর ফলে বিএনপি’র পূর্বঘোষিত সকল কর্মসূচী ভুন্ডুল হয়ে গেছে। এই পুরো ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র দু’গ্রুপ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। এর মধ্যে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল এবং একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন দুটি গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা অভ্যন্তরীণ কোন্দল এই আয়োজনে প্রভাব ফেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক পক্ষ দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিলে, অপর পক্ষও একই সময়ে এবং একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচী ঘোষণা করে। উভয় গ্রুপই নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন গত মঙ্গরবার রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে সমাবেশস্থল এবং এর আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, "জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই এলাকায় সকল প্রকার সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ।"
১৪৪ ধারা জারির পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে থেকে সমাবেশস্থলের দিকে যাওয়ার সকল পথ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দুই গ্রুপের কোনো সদস্যই সেখানে জড়ো হতে পারেনি।
উপজেলা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি কয়েকবারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী ভুন্ডুল হয়ে গেল। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং দলের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।" তিনি আরও জানান, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চললেও তা সফল হয়নি।
এই ঘটনা সুন্দরগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে এই ধরনের বিভেদ চলতে থাকলে তা শুধু দলের জন্যই নয়, স্থানীয় রাজনীতির জন্যও ক্ষতিকর। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, তবে রাজনৈতিক বিভেদ প্রকটভাবে উন্মোচিত হয়েছে।