খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরে স্থাপিত মডেল মসজিদ কমপ্লেক্সের উত্তর পাশের গর্ত ভরাটের জন্য কাজের বিনিময়ে টাকা প্রকল্পের মাধ্যমে ২লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। কিন্তু সেই গর্তটি ভরাট হয়নি। গুটুদিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গুটুদিয়া মঠের পূর্বপশের একটি নালা খননের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি গুটুদিয়া মঠ মন্দিরের দক্ষিণ পাশ থেকে সরদারপাড়া হয়ে মাঝের ভেড়ি পর্যন্ত কান্দরখাল পর্যন্ত খাল পনঃখনন নামে প্রকল্পটি বাস্বায়িত হওযার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। স্থানীয়রা জানান, বর্ষার আগে ওই নালাটি কোনমতে পেড়িকাঁদা উঠানোর কাজ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় উপজেলার মাসিক সভায় অবাস্তবায়িত অর্থ উপজেলা নির্বাহি অফিসারের ব্যাংক হিসাবে পে -অর্ডারের মাধ্যমে জমা করা হয়। কিন্ত এসব কাজ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত না হলেও প্রকল্প সভাপতিদের অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও উপজেলা পরিষদের গত ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত মাসিক সভার কার্য বিবরনী সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে কাবিখা ( কাজের বিনিময় খাদ্য ) ও কাবিটা ( কাজের বিনিময়ে টাকা) দুটি খাত থেকে ১৬৭ টি উন্নয়ন প্রকল্প অবাস্তবায়িত থাকে। নিয়ম অনুযায়ি ৩০ জুনের মধ্যে সরকারের বরাদ্দ দেয়া এসব অর্থ ব্যয় করতে হবে। কিন্তু ২৫ জুনের মধ্যে কাজ না করায় ৩০ জুনের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলি সমাপ্ত করে অর্থ উত্তোলন করার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রকল্পের সভাপতিকে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য পত্র দেয়া হয়। কিন্তু সে টাকা ফেরত না দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ প্রকল্প সভাপতিকে প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনেক প্রকল্পের কোন অস্তিস্ত খুজে পাওযা যায়নি। তাছাড়া জলাশয় ভরাট করা বেআইনী হলেও মাঠ ভরাটের নামে জলাশয় ভরাটের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওর্যাডের দিগন্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাঠ ভরাটের জন্য ১ লঅখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ সেটি একটি জলাশয়। ৪ নম্বর খর্নিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারদহা গ্রামের মোড়লপাড়া কবরস্থানের সীমানা প্রাচীরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ টাকা। অথচ এটি ব্যক্তিগত কবরস্থান।
অথচ ৩০ জুলাই সভায় পে অর্ডারের মাধ্যমে টাকা উপজেলা নির্বাহি অফিসারের ব্যাংক হিসাবে পৃথক তিনটি পে চেকে যার একটিতে ৭০ লাখ ১৪ হাজার৭৫২ টাকা, আর একটিতে ২ লাখ ৫৫হাজার টাকা, অপরটিতে ১ লাখ টাকা গত ২৫ জুন ছাড় করানো হয়।
এসব অনিয়মের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম আবু আব্দুল্লাহ বায়েজিদ। এর আগে তিনি একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করায টাকা ফেরত দিলেও ব্যাংকে জমা না দিয়ে পকেটস্থ করেন। পরবর্তিতে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওযার পর তিনি ওই টাকা প্রকল্প সভাপতির মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দিযেছেন বলে জানা গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম আবু আব্দুল্লাহ বায়েজিদ বলেন, অবাস্তবায়িত অন্যান্য প্রকল্প পরবর্তিতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাই প্রকল্প সভাপতিদের টাকা দিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন প্রকল্পই অবাস্তবায়িত নেই। অনেক প্রকল্প সঠিকভাবে হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সব কাজই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ( ডিআরআরও) মোঃ আব্দুল করিম বলেন, সরকারি কোন অর্থ বরাদ্দ দেযা ও ছাড় করার ক্ষেত্রে কোন রকম অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
এ প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, টিআর ও কাবিটার কাজ বাস্তবায়ন করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। সকল কাজই সঠিকভাবে ও নির্দিষ্ট নকশা অনুযায়ি বাস্তবাযন করা হলেই শুধুমাত্র টাকা ছাড় করা হয়। কোন প্রকল্পে অনিযম হলে বা অভিযোগ পেলে সেসব প্রকল্পের টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত আনা হবে।