সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহর আদালতে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। শুনানি শুরুর আগে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত হন। তবে শেষ মুহূর্তে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে আবেদন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবী তাহমীম মহিমা বাঁধন জানান, তাঁর মক্কেল প্রথমে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে চাননি। পরে সাংবাদিক জেড আই খান পান্নার ওকালতনামা দেখে তিনি স্বাক্ষর করেন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। সেই কারণে আদালতে আবেদন টিকিয়ে রাখা যায়নি বলে তিনি ব্যাখ্যা দেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন দাবি করেন, লতিফ সিদ্দিকী ও তাঁর সহযোগীরা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘মঞ্চ ৭১’-এর ব্যানার ব্যবহার করে তাঁরা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছিলেন। তাঁর ভাষায়, “এরা সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ফেরানোর জন্য কাজ করছেন।”
এর আগে গত শুক্রবার (২৯ আগস্ট) ঢাকার শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান ও সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নাও ছিলেন।
মামলার পটভূমিতে জানা যায়, ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মঞ্চ ৭১’ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় লতিফ সিদ্দিকী অংশ নেন। সেখানে হঠাৎ একদল ব্যক্তি প্রবেশ করে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় উপস্থিতদের অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালতে হাজির করলে সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেদিন অন্য আসামিদের জামিন আবেদন নাকচ করা হয়।
চলতি সপ্তাহে গ্রেপ্তারদের মধ্যে আরও ছয়জন জামিন চাইলেও আদালত তাঁদের আবেদনও খারিজ করে দেন। ফলে মামলার সব আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আবেদন প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। তাঁর সমর্থকরা বলছেন, বয়স ও অসুস্থতার কারণে তিনি মানবিক বিবেচনায় জামিন পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলার অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রমাণ রয়েছে। এখন মামলার পরবর্তী শুনানি ও তদন্তের দিকে দৃষ্টি রাখছেন সংশ্লিষ্টরা।