পুলিশে চাকরির নামে প্রতারণা, শিক্ষকসহ গ্রেপ্তার দুই

মো: হেলাল উদ্দীন; বাগমারা, রাজশাহী | প্রকাশ: ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম
পুলিশে চাকরির নামে প্রতারণা, শিক্ষকসহ গ্রেপ্তার দুই
পুলিশে চাকরি হওয়ার পর টাকা পরিশোধ করতে হবে, তবে তার আগে ফাঁকা চেক দিতে হবে। এমন প্রলোভনে পড়ে চেক দিয়েছেন রাজশাহীর বাগমারার মুসতাকিন হোসেন(১৮) নামের এক তরুণ। প্রতারণার বিষয় আঁচ করতে পেরে পুলিশ সুপারের শরণাপন্ন হয়ে রক্ষা পেয়েছে ওই তরুণ। পুলিশ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এক কলেজশিক্ষকসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার মাধাইমুড়ি গ্রামের জালাল উদ্দিন (৪৮) ও মোহনপুর উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের আইউব আলী (৫৪)। জালাল উদ্দিন মচমইল ডিগ্রি কলেজের রসায়ন বিষয়ের প্রদর্শক। ওসি জানান, প্রতারক জালাল উদ্দিন চাকরি দেওয়ার নামে চেক নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর সহযোগীর নাম বলেছেন৷ পুলিশ ও ভুক্তভোগী তরুণের দেওয়া তথ্য সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামের মুস্তাকিন হোসেন চলতি বছরের জুন মাসে প্রকাশিত ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক আবদেন করেন। বিষয়টি জানার পর তার একই গ্রামের বাসিন্দা মচমইল ডিগ্রি কলেজের প্রদর্শক জালাল উদ্দিন ওই চাকরি প্রার্থী তরুণের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাকে পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেতে সহায়তা করবেন বলে জানান। এই বিভাগে পরিচিত লোকজন রয়েছে, তাঁদের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগে শতভাগ নিশ্চিয়তা দেন এবং ১৮ লাখ টাকা দাবি করেন। এজন্য তিনি ফাঁকা চেক দাবি করেন। নিয়োগ পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানানো হয়। প্রলোভনে পড়ে ওই তরুণ রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ( রাকাব) মচমইল শাখার দুইটি ফাঁকা চেক দেন। এদিকে গত আগস্ট মাসে শুরু হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কয়েকটি ধাপে নিজের যোগ্যতায় কৃতকার্য হয় হন। নিয়োগ মাঠে ওই প্রতারকের কোনো ভূমিকা দেখতে না পেরে এবং আগের কথার সঙ্গে নিয়োগের কোনো মিল না পেয়ে সন্দেহ হয়। সে প্রতারিত হচ্ছেন এমন আঁচ করতে পারেন। প্রতারিত তরুণ জানান, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে ওই প্রতারক তার বাড়িতে এসে টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেন। এসময় চাকরি প্রার্থী চেক ফেরত চান এবং তদবিরের মাধ্যম চাকরি নিবেন না বলে জানিয়ে দেন। তবে প্রতারক চেক ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। নিরুপায়ে পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন যে, তদবিরে নয়, যোগ্যতায় পুলিশে লোক নিয়োগ হয় এখন। পরে তিনি রাজশাহী পুলিশ সুপারের সঙ্গে গত বুধবার সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানালে থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন। বুধবার রাতেই থানায় প্রতারণার জন্য মামলা করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলার দুইটি গ্রাম থেকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে একটি চেক উদ্ধার করা হয়। সেখানে নয় লাখ টাকার লেখা রয়েছে। বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে রাতেই মামলা নেওয়া হয়েছে। রাতেই অভিযাব চালানো হয়। একটি জালাল উদ্দিনের বাড়ি থেকে চেক উদ্ধার করা হয়েছে। আরেকটা চেক উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। আইউব নামের একজনের সহযোগিতায় প্রতারণা করেন বলে জানান। ওসি বলেন, পুলিশকে নিয়োগে কোন টাকা লাগে না তা বিজ্ঞাপনে উল্লেখসহ প্রচার করা হয়। প্রতারকেরা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করেছিলেন। দুপুরের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।