রাজশাহীর তানোরে ‘ফেমাস বিজনেস ডেভেলপন্টে লিমিটেড’ ও ‘পল্লী সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন লিমিটেড’ নামের দু’টি ভূয়া এনজিও’র বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ভুক্তভোগি সদস্যরা এবার বিক্ষোভ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন। আজ ৩ সেপ্টেম্বর বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে থানামোড় থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপজেলা পরিষদের সামনে গিয়ে বক্তব্য শেষে ইউএনও’র কার্যালয়ে স্বারকলিপি প্রদান করেন তারা।
এসময় তানোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর খালেকুজ্জান খালেকের নেতৃত্বে মানববন্ধন কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন- আমশো গ্রামের সেফাতুল্লাহ, ফরিদ, মোতালেব শাহ, ফিটু, আনোয়ার ও এমদাদুল হকসহ অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগি সদস্যগণ।
স্বারকলিপিতে বলা হয়, তানোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মশিউর রহমান ও একই ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পলি বেগম উল্লেখিত নামের দুটি ভুয়া এনজিও খুলে চেক ও ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে সাধারণ মানুষকে উচ্চ সুদে দাদন (ঋণ) দিয়ে সর্বশান্ত করে। কেউ কিস্তি দিতে না পারলে তার নামে আদালতে ১০ গুন টাকার অংক বসিয়ে মামলা ঠুকে দেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগি ফরিদা বেগম বাদি হয়ে সাবেক কাউন্সিলর মশিউর রহমান ও পলি বেগমের বিরুদ্ধে সেই সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এবার ইউএনওকে স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
সাবেক কাউন্সিলর লিখিত বক্তব্যে বলেন, তানোরে দুইটি কথিত এনজিওর ফাঁদে পড়ে অর্ধশত দরিদ্র নারী-পুরুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাদের অভিযোগ-ঋণগ্রহণের সময় জমা দেওয়া ফাঁকা স্ট্যাম্প ও চেক ব্যবহার করে ঋণ পরিশোধের পরও আদালতে মোট ৩৪ লাখ টাকার চেক প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্বারকলিপিতে আরও বলা হয়, তানোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মশিউর রহমান ও সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর পলি বেগম ‘পল্লী সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ’ এবং ‘ফেমাস বিজনেস ডেভেলপমেন্ট লিঃ (এফবিডিএল)’ নামে দুটি ভুয়া এনজিও পরিচালনা করছেন। তারা দরিদ্রদের কাছ থেকে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে উচ্চ সুদে ঋণ দিয়ে যাচ্ছেন। ঋণ পরিশোধের পর চেক ফেরত না দিয়ে বরং তার ওপর অতিরিক্ত অঙ্ক বসিয়ে মামলা করছেন।
ভুক্তভোগি ফরিদা বেগম জানান, তিনি ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট রূপালী ব্যাংক তানোর শাখা থেকে ৬৮ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। সাপ্তাহিক কিস্তির মাধ্যমে ২০২২ সালের ২২ মে পর্যন্ত সুদসহ মোট ১ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু চেক ফেরত না দিয়ে তার নামে আদালতে ১১ লাখ ৩ হাজার ৭৮০ টাকার মামলা দায়ের করা হয়।
ফরিদা বেগমের ভাই শফিকুল ইসলাম জানান, তিনিও একই কায়দায় ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন এবং পরে তা পরিশোধও করেন। কিন্তু তার নামেও ১৭ লাখ টাকার মামলা দায়ের হয়, যার ফলে তাকে ১৫ দিন কারাবরণ করতে হয়। এছাড়া ফরিদার মা রাবিয়া বেগম ও কন্যা তানিয়া তাদের নামেও যথাক্রমে ২ লাখ ৬০ হাজার ও ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার চেক মামলা হয়েছে।
এ নিয়ে ফরিদা বেগম ও তার পরিবারের চার সদস্যের নামে মোট ৩৪ লাখ টাকার চেক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মামলা থেকে রেহাই পেতে গেলে সাবেক কাউন্সিলরদ্বয় মশিউর ও পলি নানা ভয়ভীতি ও হয়রানি করছেন। এব্যাপারে অভিযুক্ত মশিউর রহমান ও পলি বেগমের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায়। এজন্য তাদের মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, অভিযোগের তদন্তে সেই সময় সমাজসেবা ও সমবায় কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। আর স্বারকলিপির ব্যাপারে উভয়পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে ডেকে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। এরপরও সমাধান না হলে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে বলে জানান ইউএনও। ই/তা