শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হতো পেঁপে। আর পিতৃ পুরুষের পারিবারিক ঐতিহ্যকে ধারন করে রেখেছেন সফল কৃষি উদোক্তা আমিনুল হক সাদী।
পেঁপে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ পেপে ফলের চাহিদাও অনেক। হোক তা কাঁচা বা পাকা। সবজি জাতীয় এ ফলের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। পেঁপে চাষে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা মেটায় অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভাবেও সাবলম্বী হওয়া সম্ভব। তেমনি একজন সফল চাষী হিসেবে আলোচনায় এসেছে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের গোয়ালাপাড়া গ্রামের মৃত কৃষক নুরুল হকের ছেলে আমিনুল হক সাদী ।
তিনি বলেন, ছাত্রাবস্থায় কৃষিসহ সাতটি বিষয়ে তিনমাসের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেন কিশোরগঞ্জ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তিনি নিজে নিজে এ পেঁপে চাষ শিখেছেন। গাছ পরিচর্যা তিনি নিজেই করেন। পেঁপে গাছের চারা রোপণের সময় জৈব সারই ব্যবহার করেন। কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করেননি। স্থানীয় কৃষি অফিস তাকে সব সময় সহযোগিতা করেন। তারাও কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে পরামর্শ প্রদান করেন। পেঁপেসহ পারিবারিক পুষ্টি বাগানে এসেছে সফলতা। তার এ সফলতা দেখে গ্রামের অন্যরাও পেঁপেসহ সবজি চাষে উৎসাহ হয়ে পেঁপে বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অনেকেই সফল হয়েছেন। এলাকায় গড়ে দিয়েছেন কৃষক পার্টনার স্কুলও। সেখান থেকে কৃষকরা নানা বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠেছেন।
আমিনুল হক সাদী জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়। পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের অনেক বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
তিনি মনে করেন, বেকার যুবকরা যদি চাষে অগ্রসর হয় তাহলে তারাও লাভবান হবেন। তিনি এ পেঁপে চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়েছেন। তার কর্মজীবন বলতে কৃষিকাজ, যুব সংগঠক, ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ, লাইব্রেরি ও বই পত্রিকা নিয়ে ঘাটাঘাটি । এসব কাজের ফাঁকে অবসর সময় পেলেই কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। তিনি এ পেঁপে চাষের পাশাপাশি তার বাড়িতে, কমলা, আপেল, কামরাংগা, গোল মরিচ,সবরি,আম,সজনা, লেবুসহ বিভিন্ন শাক সবজিও চাষ করেন। এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন পারিবারিক পুষ্টি বাগান করে। তার বাড়ির আংগিনায় স্থানীয় ও দেশী জাতের পাশাপাশি হাইব্রিড পেঁপে চাষ হয়। কয়েক বছর আগে স্থানীয় হর্টিকালচার সেন্টার থেকে শতাধিক এই পেপের চারা ক্রয় করে তার প্রতিষ্ঠিত মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগারের সামনে পতিত স্থানে রোপন করেছিলেন। কিন্ত সেখানে পানি জমে চারা গুলো মরে যায়। একটি চারা বাড়িতে রোপন করেছিলেন সেটির থেকে পেঁপেঁর অনেক ফলন হয়। এবারে সেটির বীজ থেকে আরও কিছু চারা রোপন করেন যার মধ্যে এই ফলন আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ হোসাইন বলেন, ‘পরিশ্রম করলে সাফল্য অর্জন করা যায়, তার উদাহরণ জেলায় যুব কাজে অসামান্য অবদান রাখায় একাধিকবার নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ সংগঠক আমিনুল হক সাদী ভাই। এবারে পারিবারিকভাবে পেঁপেসহ সবজি চাষ করে তা দেখিয়ে দিয়েছেন সাদী ভাই। এলাকার অনেকেই তাঁর সাফল্য দেখে ভাইকে অনুস্মরণ করছে।’ কিশোরগঞ্জজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শাহীনুল ইসলাম বলেন,
দক্ষ সংগঠক আমিনুল হক সাদীর কৃষির প্রতি আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তার পারিবারিক পেঁপেঁসহ সবজি আবাদ দেখে এলাকার কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এভাবে কৃষির প্রতি আগ্রহী তরুণরা নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি চাষ ও উৎপাদনে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবেন।মাকড়সা ও ছত্রাক ছাড়া পেঁপে গাছে তেমন কোনো রোগবালাই নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা সম্ভব।