বদরুদ্দীন উমর ইন্তেকাল করেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:৫১ এএম
বদরুদ্দীন উমর ইন্তেকাল করেছেন

দেশের প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও বাম ধারার রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সেদিন সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বাসা থেকে দ্রুত হাসপাতালে আনা হয়। তবে চিকিৎসকরা তাঁকে আর বাঁচাতে পারেননি।

১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরে জন্মগ্রহণ করেন বদরুদ্দীন উমর। তাঁর পিতা আবুল হাশিম ছিলেন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ এবং অখণ্ড বাংলার পক্ষে সোচ্চার একজন নেতা। পরিবারের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেতনার উত্তরাধিকার নিয়েই বদরুদ্দীন উমরের বেড়ে ওঠা।

ষাটের দশকে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে তাঁর লেখনী বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাঁর বিখ্যাত তিনটি গ্রন্থ—‘সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৬), ‘সংস্কৃতির সংকট’ (১৯৬৭) এবং ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৯)—সেই সময়কার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক চেতনা গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে গবেষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন্স কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। তবে ১৯৬৮ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন এবং বামপন্থি আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

বদরুদ্দীন উমর রাজনৈতিক তাত্ত্বিক হিসেবেও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত তিনি বামপন্থি মুখপত্র ‘গণশক্তি’ সম্পাদনা করেন। মুক্তিযুদ্ধকালেও তিনি মতাদর্শগত লেখালেখি ও দলিল প্রণয়নে সক্রিয় ছিলেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণার মধ্যে রয়েছে ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ (তিন খণ্ড), ‘পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি’, ‘বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর’, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ’ এবং ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক’।

চলতি বছর সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে। তবে তিনি পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তাঁর বক্তব্য ছিল, জীবনের শুরু থেকে তিনি রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি কোনো পুরস্কার গ্রহণ করেননি, তাই স্বাধীনতা পুরস্কারও গ্রহণ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

দীর্ঘ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মজীবনে বদরুদ্দীন উমর জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, বাংলাদেশ লেখক শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লেখালেখি ও গবেষণার পাশাপাশি তিনি আন্দোলন ও সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে