শিক্ষার মানোন্নয়নের এক অনন্য অভিযাত্রায় নেমেছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। তিনি যেন দায়িত্বের সীমানা ছাড়িয়ে এক আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছেন। তাঁর অগ্রযাত্রার লক্ষ্য-সাতক্ষীরার প্রতিটি সন্তানকে জ্ঞান, সৃজনশীলতা ও নৈতিকতার দীপ্তিতে আলোকিত করা।
তিনি বিশ্বাস করেন, একটি জাতির প্রকৃত শক্তি নিহিত থাকে শিক্ষায়। সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন এক মহৎ কর্মযজ্ঞের-প্রতিটি উপজেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে একটি করে মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল পাঠদানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এখানে গড়ে উঠবে শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা ও সৃজনশীলতার এক সুদৃঢ় সংস্কৃতি। থাকবে শতভাগ উপস্থিতি ও শতভাগ পাসের নিশ্চয়তা, প্রাণবন্ত খেলার মাঠ, শরীরচর্চার আয়োজন, স্কাউট ও গার্লস গাইড, সঙ্গীত, আবৃত্তি ও বিতর্কচর্চার মতো সহপাঠ্য কার্যক্রম। নোট-গাইড নিষিদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করা হবে। সর্বোপরি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে বিকশিত হবে নতুন প্রজন্ম।
শিক্ষার পবিত্র অঙ্গনকে রক্ষা করতে তিনি কোচিং ব্যবসার অশুভ প্রভাবকে দৃঢ় হাতে প্রতিরোধ করেছেন। কোচিং সেন্টার বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের আবারও স্কুলে ফিরিয়ে আনার এ পদক্ষেপে সাড়া জেগেছে সর্বত্র। তাঁর মতে-“শিক্ষা কোনো পণ্য নয়; এটি একটি মৌলিক অধিকার এবং জাতির উন্নয়নের ভিত্তি।”
প্রশাসকের ভূমিকা পেরিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অভিভাবক। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তিনি শ্রেণিকক্ষ ঘুরে দেখেন, শিক্ষকদের দায়িত্বশীলতা যাচাই করেন, শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করেন, তাদের স্বপ্ন শোনেন। তাঁর এ সম্পৃক্ততা শিক্ষাঙ্গনে সঞ্চার করেছে নতুন প্রাণ ও আস্থা।
মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা প্রশংসনীয়। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের হাতে তিনি তুলে দিচ্ছেন সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন অনুপ্রাণিত হচ্ছে, তেমনি পরিবার ও প্রতিষ্ঠানগুলিও পাচ্ছে নতুন প্রেরণা। সম্প্রতি তিনি সাতক্ষীরা পিএন হাইস্কুল এন্ড কলেজে পরিদর্শনে গিয়ে এ প্লাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেন ও শ্রেণিকক্ষ ঘুরে দেখেন। অভিভাবক সমাবেশ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাঁর এ উদ্যোগে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন।
মতবিনিময়ের আলোচনায় নতুন দিশা
২৪ আগস্ট সদর উপজেলা পরিষদের ডিজিটাল কর্নারে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রশাসন ঘোষণা দেয়-সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় মোট ২৮টি মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। সভায় শিক্ষক, অভিভাবক ও কর্মকর্তারা একসাথে প্রতিজ্ঞা করেন-আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠনের এ অভিযাত্রায় তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
এর আগে ৩০ জুলাই জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায়ও নেওয়া হয় একই সিদ্ধান্ত। সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষাক্ষেত্রের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ।
আজ সাতক্ষীরার মানুষ নতুন করে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে-শিক্ষার আলোয় আলোকিত ভবিষ্যৎ আর কল্পনা নয়, বাস্তবতার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। আর এই নবজাগরণের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। তিনি শুধু একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, বরং হয়ে উঠেছেন শিক্ষার অকৃত্রিম অভিভাবক, এক আলোকিত স্বপ্নচারী।