ভোট বর্জন ও অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো জাকসুর ভোটগ্রহণ, গণনা শুরু ৭টায়

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:৪৯ পিএম
ভোট বর্জন ও অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো জাকসুর ভোটগ্রহণ, গণনা শুরু ৭টায়

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে নানা অনিয়ম, কারচুপি ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৫টায় সমাপ্ত হয়। সন্ধ্যা ৭টায় ভোট গণনা শুরু হওয়ার কথা বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।

নির্বাচনের দিনভরই নানা অব্যবস্থাপনা ও অভিযোগ লক্ষ্য করা গেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। জিএস পদপ্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী মওলানা ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মেয়েদের হলে একই মেয়ে একাধিকবার ভোট দিয়েছে। শিবিরপন্থী সাংবাদিকরা আমাদের প্রার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। এই প্রহসনের নির্বাচনে আমরা থাকতে পারি না।”

ছাত্রদলের অভিযোগে উঠে এসেছে, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ভোট দেওয়ার কালি অমোচনীয় হওয়ায় এবং একটি ব্যালট মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখায় ভোট দুই ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ হলে ভোটার তালিকায় ছবি না থাকায় ভোট স্থগিত থাকে। ছাত্রদলের ভিপি পদপ্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান দাবি করেন, প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে জেতানোর জন্য শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে। এছাড়া প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে বাধা দেওয়া, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে লিফলেট বিতরণ, অমোছনীয় কালি ব্যবহার না হওয়ায় একাধিকবার ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়া, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার কারণে কারচুপির আশঙ্কা, কিছু হলে ভোটার তুলনায় বুথের সংখ্যা কম থাকা এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থীকে হেনস্তা করার অভিযোগও উঠে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯১৯ জন। মোট ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৭৮ জন প্রার্থী। নির্বাচনে ছাত্রদল ছাড়াও ছাত্রশিবির, বামধারা ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত মিলিয়ে মোট আটটি প্যানেল অংশ নেয়।

অভিজ্ঞ শিক্ষক ও পর্যবেক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি নিজের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে ভোট প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণকালে দেখেছেন, অমোচনীয় কালি ব্যবহার হওয়ায় একজন ভোটার একাধিকবার ভোট দিয়েছেন। তাজউদ্দীন হল, কবি নজরুল হল, খালেদা জিয়া হল ও জাহানারা ইমাম হলসহ বিভিন্ন হলে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। তিনি আরও দাবি করেন, ব্যালট পেপার ও ভোটিং মেশিন সরবরাহ করেছে এক জামায়াত নেতার মালিকানাধীন কোম্পানি। অতিরিক্ত ব্যালট মুদ্রণ ও বিতরণ করা হয়েছে, যা নির্দিষ্ট প্রার্থীর ভোট বাড়ানোর উদ্দেশ্যে গোপনে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

অধ্যাপক নজরুল, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান—এই তিন শিক্ষক বিএনপি সমর্থক—নির্বাচনের অনিয়ম ও দলীয় প্রভাবের অভিযোগ তুলে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “এসব অনিয়মের কারণে আমরা এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলতে পারি না। ছাত্রদল প্যানেলের মতো আমরাও পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি এবং নির্বাচন বয়কট করছি।”

ভোট গণনার পর ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে ঘোষণা করা হবে। তবে ছাত্রদলের বর্জন ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের কারণে নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা ইতিমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে