রাজশাহীর তানোরে সরকারি জমি ভরাটে বাঁধা দেওয়ায় ইউনয়িন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর নিষিদ্ধ সংগঠনের স্থানীয় আওয়ামী লীগ দোসররা হামলা চালিয়ে পাঁকড়াও করে। পরে জীবন বাঁচানোর তাগিদে পালিয়ে রক্ষা পাই ভূমি অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এনিয়ে ঘটনার দিন ৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তানোর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ সজীব বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দেন। পরে ইউএনওর নির্দেশে ৯ সেপ্টেম্বর জমি জরিপ করে ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাতে থানায় মামলাটি রুজু করা হয়। তবে, আসামীদের গ্রেফতার করার চেস্টা চলছে বলে জানান তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন। মামলার আসামীর হলেন, তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া উপরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল গফুরের পুত্র কথিত কবিরাজ আ.লীগের দোসর আবুল কালাম আজাদ (৫৬) ও তার ভাই মোতাহার আলী (৩২), একই এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের পুত্র কেরামত আলী (৪৫) ও রহিম উদ্দীনের পুত্র মামুনুর রহমান (৪০) সহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন ব্যক্তি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। মামলার এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউপির পোস্ট অফিস সংলগ্ন চাঁন্দুড়িয়া মৌজায় সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। যার দাগ নম্বর ১২৬৮। পরিমান- ১১ শতক। ওই জায়গায় সম্প্রতি চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এমন খবরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দোসর কালাম তার লোকজন নিয়ে সরকারি ওই জায়গা জবর-দখলের উদ্দেশ্যে অবৈধ স্থাপনা তৈরির লক্ষ্যে ৪ সেপ্টেম্বর বালু দিয়ে ভরাট শুরু করে। এসময় স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করে। এহেন খবরে সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে তানোর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন ইউএনও। নির্দেশ মোতাবেক ৯ সেপ্টেম্বর জমি জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায় শুধু ভরাট করা জায়গা নয়, রাস্তার পাশে অবস্থিত দ্বিতল ভবনের প্রায় ১৪ ফিট সরকারি সম্পত্তি আবুল কালাম আজাদের দখলে রয়েছে। ফলে তাকে দুই সপ্তার মধ্যে ভবন সরানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিয়ে মোবাইলে চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়ন এনসিপির যুগ্ন-আহবায়ক আশিকুল ইসলাম জানান, আবুল কালাম আজাদ নিষিদ্ধ সংগঠন চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে থাকার দাপটে এলাকার সরকারি খাস ও ভিপি প্রায় সম্পত্তি এখনো তার দখলে রেখেছেন। কেউ এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। বর্তমানে আ.লীগ সরকার পতনের পর তিনি স্থানীয় জামায়াত-বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে চলছেন। গেলো শনিবার ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে থানার এসআই নজরুল ইসলাম অন্য এক ঘটনা তদন্তে সেখানে যান। এসময় স্থানীয় জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা কালামের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সাফাই গেয়ে মব সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ সেখান থেকে ফিরে যায়। আমরা ভূমিদস্যু কালামকে গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি। এনিয়ে ভূমিদস্যু আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি ওই জায়গা অনেক আগ থেকে ভোগ-দখল করছেন। বর্তমানে ভূমি অফিসের লোকজন সেখানে ভূমি অফিস বানাবেন। এজন্য তিনি ওই জায়গায় গ্যারেজ ঘর নির্মাণের জন্য মাটি ফেলে ভরাট করছেন। আগে তিনি আওয়ামী লীগ করা অবস্থায় ওই জায়গা দখলে কেউ সাহস পায়নি। তিনি স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মী সাথে উঠাবসা করছেন। এখনো যত বড়ই শক্তি আসুক কাউকে ওই সম্পত্তি দখল করতে দেবেন না বলে দম্ভোক্তি দেখান তিনি। ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ সজীব বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশনায় অফিসের স্টাফসহ তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সেখানে আগে থেকেই কালাম ও তার ভাই মোতাহার সরকারি জায়গা ভরাট করছিলেন। এসময় গ্রামপুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। সরকারি জায়গা ভরাট করছেন কেনো? এমন প্রশ্নে কালাম উত্তেজিত হয়ে অফিস স্ট্যাফদের কথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাকে ধাক্কা দেন। পরে তার হুকুমে মোতাহার, কেরামত ও মামুনুর ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন ব্যক্তি হামলা চালিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তিনি আরও বলেন, এমন হামলার ঘটনা নিয়ে ওইদিন থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ৭ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাতে থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে আক্ষেপ করেন তিনি। এব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আর সন্ত্রাসি কায়দায় সরকারি জায়গা দখল করে সরকারি কাজে বাধা ও কর্মকর্তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজসহ শারীরিকভাবে লাঞ্চিত এটা বড় ধরনের অপরাধ। এজন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে করে কেউ ভবিষ্যতে এমন দুঃসাহস যেন কেউ না পায়। ই/তা