সরকারি কর্মকর্তারা সম্পদের হিসাব জমা দিলেও নিশ্চুপ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:১২ এএম
সরকারি কর্মকর্তারা সম্পদের হিসাব জমা দিলেও নিশ্চুপ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব জমা দিলেও তা প্রকাশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিশ্চুপ। অথচ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বছরই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে সম্পদের হিসাব নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেক্ষেত্রে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে বাধ্যতামূলক করে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সব সরকারি কর্মচারীর হিসাব দেয়া। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে সবাই সম্পদের হিসাব জমা দিলেও এখন সেগুলো বিভিন্ন দপ্তর-মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে রয়েছে। ওই হিসাব কী করা হবে তার কোনো নির্দেশনা না থাকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর-অধিদপ্তর কিছু করতেও পারছে না। সবাই জনপ্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তাকিয়ে রয়েছে। সচিবালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ প্রশাসন ক্যাডার, উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদ এবং অন্য নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব জমা নিয়েছে। সেখানে ৬ হাজারের বেশি হিসাব জমা পড়েছে। আর অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব সিলগালা খামে তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকা সর্বশেষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৮ জন। তার মধ্যে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা ১ লাখ ৯০ হাজার ৯২৮ জন। দশম থেকে ১২তম গ্রেডের কর্মকর্তা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৭ জন। ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডের কর্মচারী ৬ লাখ ২০ হাজার ৯৭২ এবং ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারী ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩৮ জন। অন্য কর্মচারী ৫ হাজার ৭০৩ জন। 

সূত্র জানায়, সরকারি বিভিন্ন দফতর লাখ লাখ কর্মচারীর সম্পদের সিলগালা খাম নিয়ে অনেকটা বিপাকে। ওসব হিসাব ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করবেন নাকি আপৎকালীন সংরক্ষণ করবেন সে বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। ফলে সরকারি দফতরগুলো পড়েছে বিড়ম্বনায়। তাছাড়া হার্ডকপিতে সম্পদের হিসাব নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাটা বেশ ঝামেলাপূর্ণ। 

সূত্র আরো জানায়, ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল এবং স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ওই নিয়ম মানেননি। তাছাড়া এ বিষয়ে সরকারেরও কোনো তদারকি ছিল না। তবে গত বছরের আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে বলে জানায়। ২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বিস্তারিত জানান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিবকে সভাপতি করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিলের ফরম্যাট প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে বলা হয়েছিল। কমিটি ফরম্যাট ও সুপারিশ প্রতিবেদন দেয়ার পর গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সব সরকারি চাকরিজীবীকে প্রতি বছর সম্পদের হিসাব দিতে হবে। ২০২৫ সাল থেকে প্রতি বছরের সম্পদের হিসাব ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দিতে হবে। তবে ২০২৪ সাল পুরো না পাওয়ায় ওই বছরের হিসাব ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দেয়ার সময় বেঁধে দেয়া হয়। পরে সময় এক মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয় এবং পরে আরো দেড় মাস অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। যদিও তখন সরকারি চাকরিজীবীরা ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়ার পরও আলাদাভাবে সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার এই বাড়তি বিড়ম্বনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিলো। তারপরও সরকারের নির্দেশনা মেনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব দিয়েছে। কিন্তু সম্পদের হিসাব পাওয়ার পর লাখ লাখ কর্মচারীর সিলগালা খামগুলো পড়ে আছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-দপ্তরের আলমারিতে। এখন ওই সম্পদের হিসাব কী করা হবে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ওপর নির্ভর করছে। বর্তমানে যেভাবে ফাইল সিলগালা রাখা আছে সেভাবেই রাখা ছাড়া আপাতত কাজ নেই। 

এদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাবের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রশাসন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. রাহেদ হোসেন জানান, হিসাব জমা নেয়ার পর আর কাজ হয়নি। রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে একটা কাজ হবে। তবে বিষয়টি শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ দেখছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে