খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর, রঘুনাথপুর, ধামালিয়া, মাগুরাঘোনা, খর্ণিয়া, আটলিয়া, গুটুদিয়া ও ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। পানিমগ্ন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাবন করতে হচ্ছে তাদের। এ বছর ১০ জুলাই ভারি বৃষ্টির পর থেকে জলাবদ্ধতা শুরু হয়।
পানিবন্দী গ্রামগুলো হলো, মুজারঘুটা, বারানসি, সাড়াভিটা, বটবেড়া, কৃষ্ণনগর, দেড়লি, বশিরাবাদ, আন্দুলিয়া, কোমরাইল, চেচুড়ি, কাটেঙ্গা, টোলনা, বরুনা, গজেন্দ্রপুর, রুপরামপুর, রামকৃষ্ণপুর, শান্তিনগর, ঘোনা, বিলপাটিয়ালা, মাধবকাটি, মান্দ্রা, ময়নাপুর, বিলসিংগা, রানাই, পাঁচপোতা, ঘোষড়া, বাদুড়িয়া, আলাদিপুর, আটলিয়া, বয়ারশিং, আধারমানিক, খড়িয়া, কোমলপুর, গুটুদিয়া, পাটকেলপোতা, মির্জাপুর, হাজিডাঙ্গা, গোলনা, খলসী, সাজিয়াড়া ও আরাজি ডুমুরিয়া।
এদিকে, ডুমুরিয়ার জলাবদ্ধতা থেকে নিরসনের লক্ষ্যে স্থায়ী সমাধানের পথ হচ্ছেন জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলো। একই সঙ্গে এলাকাবাসীও দ্রুত তাদের দুরবস্থা থেকে উত্তরণের দাবি তুলেছেন। যার প্রেক্ষিতে খুলনার নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুর রহমান আজ শনিবার সরেজমিনে জলাবদ্ধ এলাকা এবং উপজেলার শলুয়া স্লুইজগেট পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জলাবদ্ধ ও দুর্যোগকবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন ও মতবিনিময় করেন। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা সংবাদকর্মী আব্দুস সালাম, এস এম জাহাঙ্গীর আলম, সুব্রত কুমার ফৌজদার এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ফিরোজ হোসেনসহ অনেকেই জলাবদ্ধতার হাত থেকে ফুলতলা-ডুমুরিয়ার বাসিন্দাদের রক্ষার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের জন্য তিন ধাপে চেষ্টা চলছে। প্রথমত দ্রুত কিভাবে দলাবদ্ধতা কমানো যায় সেটির কাজ চলছে। দ্বিতীয়তঃ মধ্যবর্তী এবং তৃতীয়ত : দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। এসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। এলাকাবাসীও বিভিন্ন ধরনের সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এলাকাবাসীর সমস্যা এবং পরামর্শ নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এলাকাবাসী বলেন, প্রতিবছর বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে ডুমুরিয়া। এতে হাজার হাজার মৎস্য ঘের তলিয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সবজি। বর্তমানে ডুমুরিয়ার কমপক্ষে ৭টি ইউনিয়ন এখন পানির নিচে। এতে এর কাল মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার সূত্র জানিয়েছে, ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দে শৈলমারী গেটের মুখ থেকে সালতা মোহনা পর্যন্ত পলি অপসারণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি চলতি আগস্ট মাসের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা ডিভিশন-১। চলতি বর্ষা মৌসুম থাকা পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ চলমান থাকবে। অর্থাৎ যখন যেখানে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন তখন সেখানে পলি অপসারণের কাজ করা হবে। তবে, বর্ষা মৌসুম শেষ হলে এলাকার জলাবদ্ধতা কমে গেলে প্রকল্পের কাজও বন্ধ রাখা হবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এলাকবাসী সাময়িক ভাবে জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি পাবেন। এমনকি এই বর্ষা মৌসুমে তাদের ঘের, পুকুর, ঘরবাড়ি এবং ফসল ফলাদিও জলবদ্ধতার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।
এছাড়া প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে শৈলমারী নদীর সাড়ে ১৫ কিলোমিটার ড্রেজিং, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি পাম্প স্থাপন এবং ২৪টি খাল পুনঃখনন প্রকল্পের সমীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। মূলত নদী ও খাল খননের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশের দিক বিবেচনায় সমীক্ষাটি শেষ করতে আরো দুই মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। এরপরই উল্লেখিত ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় দাখিল করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড়ের অনুমোদন হলে কাজটি শুরু হবে। এ প্রকল্পটিও বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা বিভাগ-১।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা বিভাগ-১'র নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বলেন, শৈলমারী নদীর পলি অপসারণের কাজটি রাজস্ব বিভাগের অর্থে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া নদী খননসহ অন্যান্য কাজের বিষয়টি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ের পরই শুরু হবে
তিনি বলেন, তিনটি ধাপে এসব কাজ বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে চলমান বর্ষা মৌসুমে জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প মেয়াদী পলি অপসারণ কাজ শুরু হয়েছে। এরপর মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সবগুলো পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট এলাকা জলাবদ্ধতা মুক্ত করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের মাছের ঘের, ফসল, খেত খামার, রাস্তা-ঘাট এবং ঘরবাড়িসহ সবকিছুই জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্ত থাকবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের জন্য শৈলমারী গেটের মুখ থেকে শুরু করে আপার সালতা পর্যন্ত জরুরীভাবে পলি অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। দুটি ভাসমান ভেকু ও দুটি লংবুম ভেকু দিয়ে খননের কাজ চলছে। আশাকরি দ্রুত পানি নিষ্কাশন হবে। গত ২২ আগস্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন।
তিনি বলেন, প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দে এ নদী ড্রেজিং, ২৬টি খাল পুনঃখননসহ আরো ৫টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্থাপন প্রকল্পটি অনুমোদনের পথে। এই কাজ বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধ নিরসনে স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশা করছেন তিনি।