সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে মায়ের আকুতি

এক যুগেরও বেশি সময় পার, হয়নি ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ হত্যার বিচার

এফএনএস (এম এ আজিম; খুলনা) : | প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:০৫ পিএম
এক যুগেরও বেশি সময় পার, হয়নি ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ হত্যার বিচার

খুলনা মহানগরীর লবণচরার বাংলাদেশ সী ফুডস রোড এলাকার ঘের ব্যবসায়ী মোঃ আলমগীর হোসেন বিদ্যুৎ (২৪) হত্যা মামলার বিচার দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নিষ্পত্তি হয়নি। মামলার দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে আসামিরা জামিনে বের হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। এমনকি এক ছেলেকে হত্যার পর আর এক ছেলেকেও হত্যা করবে বলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে। তাদের ভয়ে সাক্ষীরাও আদালতে সাক্ষ্য দিতে ভয় পাচ্ছে। এ অবস্থায় সন্তান হত্যার ন্যায় বিচার প্রাপ্তি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দ্রুত সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা এবং আসামিদের অপতৎপরতা থেকে রক্ষা করে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির আকৃতি জানিয়েছেন বিদ্যুতের মা বৃদ্ধা জাহানারা বেগম।

রোববার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

লিখিত বক্তব্যে জাহানারা বেগম বলেন, ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীরা আমার ছোট ছেলে মোঃ আলমগীর হোসেন ওরফে বিদ্যুৎকে (২৪) নগরীর খানজাহান আলী (র.) সেতু এলাকায় নিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার পর ৭ ডিসেম্বর আমি  বাদি হয়ে খুলনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করি (মামল নং- ০৩) মামলাটি বর্তমানে খুলনা মহানগর দায়রা জজ (মামলা নং: ৪৪৯/১৫) বিচারাধীন আছে। মামলায় লবণচরা বাংলাদেশ সী ফুডস রোড এলাকার নাজিম খলিফার দুই ছেলে আওয়ামী সন্ত্রাসী আরমান খলিফা ও আরিফ খলিফা, লবণচরা মোহাম্মদীয়া পাড়া মসজিদ এলাকার আব্দুল জলিল হাওলাদারের ছেলে হারুন হাওলাদার, লবণচরা ইব্রাহীমিয়া মাদ্রাসা রোড এলাকার হামিদ মিস্ত্রীর ছেলে মোঃ সিরাজ এবং লবণচরা মোক্তার হোসেন রোড এলাকার হযরত আলী ফকিরের ছেলে বাদল ফকিরকে আসামি করা হয়। এ মামলায় আসামিরা বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়ে কারাগারেও ছিল। কিন্তু আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। এই সকল আসামীদের বিরুদ্ধে একাধিক বিভিন্ন মামলাও রয়েছে।

জাহানারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার কলিজার টুকরো সন্তানকে হত্যা করেও সন্ত্রাসীরা ক্ষ্যান্ত হয়নি। উপরন্ত জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা এখন মামলা তুলে নিতে আমি ও আমার এক মাত্র সন্তান এবং মামলার স্বাক্ষীদের জীবন নাশসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছে। এ বিষয়ে বার বার সাধারণ ডায়রি করার ফলে হত্যাকারী-সন্ত্রাসীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কোন সময় তারা আমি ও আমার বড় ছেলেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে। এ অবস্থায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি।

তিনি বলেন, হত্যাকারী-আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমি এ পর্যন্ত খুলনা ও লবণচরা থানায় চারটি সাধারণ ডায়রি করেছি। সর্বশেষ গত ৩ মার্চও আমি লবণচরা থানায় জিডি করি। কারণ ২ মার্চ দুপুরে মামলার চার্জশিটভূক্ত প্রধান আসামি আরমান তার ভাই আরিফ এবং অপর আসামি জুয়েল শেখ, হারুন হাওলাদার, সিরাজ ও বাদল ফকিরসহ আরো অনেকে আমার বাসার সামনে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য আমাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। এমনকি তারা আমাকে ও আমার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন বিপ্লবকেও হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। এছাড়াও একই ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকির কারণে আমি ২০১৪ সালের ৪ মার্চ ও ২ মে খুলনা থানায় এবং ওই বছরের ৪ মে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লবণচরা থানায় সাধারণ ডায়রি করি। এতে সন্ত্রাসীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ক্ষতি করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। তারা যে কোন সময় আমি ও আমার বড় ছেলেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে বলে আশংঙ্কা করছি।

এ অবস্থায় তিনি, তার বড় সন্তান, পরিবারের সদস্য এবং মামলার স্বাক্ষীদের নিরাপত্তা প্রদান মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকার প্রধান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।