নগরীর বাবুরাইল বউবাজারের একটি সাততলা ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এক দম্পতি ও তাদের চার বছর বয়সী ছেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সন্ধান পেয়ে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ভাড়া বাসার দরজা ভেঙে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করে বলে জানায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, নিহতরা হলেন হাবিবুল্লাহ শিপলু (৩৫), তার স্ত্রী মোহিনী আক্তার মীম (২৫) এবং তাদের চার বছর বয়সী ছেলে আফরান (৪)। পরিবারটি ওই ভবনের চতুর্থ তলায় ভাড়া থাকতেন। পুলিশ বাংলাদেশ সময় সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। সেখানে শিপলুকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলন্ত দেখেন পুলিশ সদস্যরা; অন্য কক্ষে স্ত্রী ও শিশুকে বিছানায় অচেতন ও মুখের ওপর বালিশ চাপানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন এবং তদন্ত কর্মকর্তা পিবি জামাল উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার তদন্ত পরিচালনা করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিপলু প্রথমে স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন এবং পরে নিজের হাতে আত্মহত্যা করেছেন; তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও নীরিক্ষার ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে এবং আইনগত ব্যবস্থা চলছে— যোগ করেন তিনি।
পরিবারের বরাত দিয়ে শিপলুর বড় ভাই অলিউল্লাহ লাভলু জানান, রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না; সোমবার বিকেলে স্বজনরা ফ্ল্যাটে গিয়ে দরজা বন্ধ পায়। বহু ডাকাডাকি ও স্থানীয়দের সহায়তা সত্ত্বেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয় এবং পরে দরজা ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করে এই চিত্র দেখে দিশেহারা হন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশ ও স্থানীয়রা ঘটনার পেছনে আর্থিক চাপকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দেখছেন। নিহত শিপলু ‘রমজান সমিতি’ নামে একটি সমিতির ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানায়, করোনা মহামারির সময় ওই সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেলে সমিতির মালিক গ্রাহকদের জমা রাখা টাকার বড় অঙ্ক নিয়ে পালিয়ে যান। গ্রাহকরা পরে সমিতির মালিক ও শিপলুর বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং শিপলুকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন—এই পরিস্থিতিতে শিপলু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বলে স্থানীয়দের বক্তব্য। পুলিশ বলেছে, এই চাপ ও হতাশাই সম্ভবত ঘটনার পেছনে ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ময়নাতদন্ত ও তদন্ত প্রতিবেদন অপেক্ষা করতে হবে।
স্থানীয়রা এবং ইউএনও কার্যালয়ের প্রহরীর বিবরণ অনুযায়ী, ফ্ল্যাটে প্রবেশের সময় অনেক কক্ষ খোলা ছিল এবং সেসব কক্ষে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের লক্ষণ ছিল না; তবে যে কক্ষে মা ও শিশু ছিল সেখানে মুখের ওপর বালিশ চাপানো ছিল—এইসব দিক তদন্তকারীদের সবশা ধরা হচ্ছে। ওসিসহ উচ্চপর্যায়ের পুলিশ জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে তদন্ত অব্যাহত আছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ফরেনসিক ফলাফল ছাড়া হত্যাকাণ্ড না আত্মহত্যা—কোনটি ঘটেছে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
পুলিশ মামলা গ্রহণ করে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চালাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।