দারিদ্র্য কোনো বাধা নয়, স্বপ্ন আর পরিশ্রম থাকলে সাফল্য ধরা দেয়— এমনই প্রমাণ দিয়েছেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বালুদিয়াড় গ্রামের সন্তান রিমন আলী। মাদ্রাসায় প্রথম স্থান অধিকার থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজের ছাত্রনেতৃত্ব এবং সর্বশেষ ৪৮তম বিশেষ বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে তিনি জীবনের সাফল্যের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছেন।
শিক্ষাজীবনের প্রথম আলোঃ
রিমনের শিক্ষাজীবনের শুরু বালুদিয়াড় দাখিল মাদ্রাসায়। ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় তিনি গোল্ডেন এ প্লাস অর্জন করেন। শুধু তাই নয়, সে সময় মাদ্রাসা সেকশনে পুরো থানায় প্রথম স্থান অধিকার করে আলোচনায় আসেন। দুই বছর পর ২০১৯ সালে বানেশ্বর কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায়ও গোল্ডেন এ প্লাস পান তিনি।
মেডিকেলে ভর্তির যাত্রাঃ
একই বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশব্যাপী ১১১৯তম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় ১৩৫৭তম স্থান অর্জন করেন রিমন। ফলে তিনি একইসঙ্গে দুই জায়গায় ভর্তির সুযোগ পান। শেষ পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নযাত্রা শুরু করেন।
চিকিৎসাশাস্ত্র থেকে বিসিএসেঃ
২০২৫ সালের জুন মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভা সম্পন্ন করেন তিনি। এর অল্প কিছুদিন পর, ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত ৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রথমবারের চেষ্টাতেই লিখিত পরীক্ষায় সফল হয়ে মৌখিক পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হন। ফলাফল প্রকাশের পর জানা যায়, তিনি বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
ছাত্রদলে নেতৃত্বঃ
শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সংগঠনেও নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন রিমন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত নতুন কমিটিতে তাকে এই পদে নির্বাচিত করা হয়। নেতৃত্ব, পড়াশোনা এবং সেবার মানসিকতা— সব ক্ষেত্রেই তিনি সমানভাবে সক্রিয়।
সংগ্রামী পরিবারের সন্তানঃ
রিমনের সাফল্যের পেছনে রয়েছে সংগ্রামী পরিবারের ত্যাগ। তার বাবা স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় নৈশ প্রহরীর চাকুরি করেন এবং দিনের বেলা একটি মুদি দোকান চালিয়ে সীমিত আয়ের এই পরিবারের অক্লান্ত পরিশ্রমেই আজকের এই সাফল্যের পথ তৈরি হয়েছে।
রিমনের অনুভূতিঃ
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রিমন বলেন, “আমার বাবা-মায়ের ত্যাগ আর আল্লাহর রহমতেই এতদূর আসতে পেরেছি। পরিশ্রম আর লক্ষ্য থাকলে কোনো স্বপ্নই অসম্ভব নয়। আমি চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।”
এলাকায় আনন্দের আমেজঃ
রিমনের এই অর্জনে চারঘাট ও আশপাশের এলাকায় আনন্দের আমেজ বিরাজ করছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও রিমনের সাফল্য তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।