পর্যটকশুন্য সুন্দরবনে হতাশ ট্রলার শ্রমিকরা

এফএনএস (এস.এম. শহিদুল ইসলাম; সাতক্ষীরা) : | প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম
পর্যটকশুন্য সুন্দরবনে হতাশ ট্রলার শ্রমিকরা

শারোদ রাতের রূপালী আলোয় সুন্দরবনে কোলঘেসে নিঃশব্দে বয়ে চলা চুনকুড়ি নদীর ঢেউ যেন রূপার পাতার মতো ঝলমল করে। আকাশে ভেসে থাকা সাদা মেঘ আর সুন্দরবনের চিরসবুজ গাছপালা একসাথে মিশে যেন স্বপ্নের ছবি আঁকে। ভোর হলে হালকা কুয়াশার আবরণ সরিয়ে সোনালি রোদ নদীর জলে ঝিকমিক করে ওঠে। গাছের পাতায় শিশিরবিন্দু, পাখির কলতান আর নদীর তীরের বন্যপ্রাণী মিলে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে সুন্দরবনের সকাল।

সুন্দরবন-শারদ রাতের জ্যোৎস্না আর প্রভাতের সোনালি আলোয় ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক অপরূপ আমন্ত্রণ। রূপালী জোছনায় ঝলমলে নদী, আকাশে মেঘের খেলা আর চিরসবুজ বনভূমি হাতছানি দেয় স্বপ্নময় অভিজ্ঞতায়। ভোরের আলোয় শিশির, পাখির কলতান ও প্রকৃতির নিসর্গ যেন হয়ে ওঠে এক অনন্য রূপকথার জগৎ। 

টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর পহেলা সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হয় সুন্দরবনের দুয়ার। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হবে সুন্দরবন- এমন প্রত্যাশা নিয়ে ট্রলার সাজিয়েছিলেন মাঝিরা। কিন্তু মাঝিদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। আসছে না কাঙ্ক্ষিত পর্যটক। ফলে শুন্য নদীর তীরে অপার হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে মাঝিদের। 

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে ঘিরে প্রতিবছর এসময় পর্যটকদের ভিড় জমে। কিন্তু এ বছর ভ্রমণপিপাসুদের উপস্থিতি না থাকায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রলার শ্রমিকরা।

গাবুরা চকবারা এলাকার ট্রলার চালক রিপন গাজী বলেন, গত তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে আমরা বহু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, কিন্তু পাশ ছাড়ার পরে পর্যটক খুবই কম আর এই পর্যটক কম হওয়ায় আমরা বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পর্যটকদের সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য ভাড়া করা হয় নৌকা ও ট্রলার। এসব নৌযানে কর্মরত শত শত শ্রমিকের আয় নির্ভর করে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকদের ওপর। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে পর্যটক না আসায় ট্রলারগুলো অলস পড়ে আছে। আয় না থাকায় শ্রমিকরা পড়েছেন হতাশায়।

শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ঘাটের ট্রলার মালিক আনিসুর রহমান বলেন,  সাতক্ষীরা থেকে মুন্সিগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশার কারণে হয়তবা সুন্দরবনে পর্যটক আসতে চাইছে না।


সুন্দরবন সংলগ্ন নীলডুমুর ঘাটের ট্রলার শ্রমিক শাজাহান আলী বলেন, সুন্দরবন দেখতে মানুষ না আসায় আমরা এখন বেকার হয়ে বসে আছি। প্রতিদিনের খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, পর্যটক না আসায় শুধু শ্রমিকই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের বাজার, হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ছোট ব্যবসায়ীরা। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে পর্যটক কম আসছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন থেকে গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) তারিখে সুন্দরবন ভ্রমন করতে এসেছেন মাত্র ৪৪ জন পর্যটক। যা অন্যবারের খুবই কম।

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে পর্যটক না আসলে স্থানীয় শ্রমিকদের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সুন্দরবন ট্রলারঘাট মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি এমএ হালিম বলেন, নীলডুমুর ঘাটে ৬০টি ও মুন্সিগঞ্জ ঘাটে ২০টি মিলে মোট ৬০টি পর্যটকবাহী ট্রলার রয়েছে। প্রতি বছর বর্ষাকাল শেষে এমনই দিনে শতশত পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয় পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ। অথচ এবার পর্যটকশুন্য হয়ে পড়েছে সুন্দরবন। পর্যটক যারা আসছেন  তাদের জন্য ৪ থেকে ৫টি ট্রলার যথেষ্ট। বাকী ৭৫টি ট্রলার শ্রমিকদের বেকার বসে থাকতে হচ্ছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে