অফ সিজনে তরমুজ ও সামমাম চাষে কোটিপতির স্বপ্ন

এফএনএস (মহানন্দ অধিকারী মিন্টু; পাইকগাছা, খুলনা) : | প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম
অফ সিজনে তরমুজ ও সামমাম চাষে কোটিপতির স্বপ্ন

খুলনার পাইকগাছায় দেলুটির ২২নং পোল্ডারের ডিহিবুড়া খাল। এখানে কিছুদিন আগে খালের দু'পাড়ে মাটির উচু স্তুপে গাছপালা, ইঁদুর আর বিষধর সাপের ভয়ে মানুষ আতঙ্কে থাকতো। সেখানে সবুজ ফসলের বিপ্লব দেখে এলাকার মানুষ রীতিমত মুগ্ধ। খাল ইজারাদার তরুন যুবক বিধান মন্ডল মাছ চাষের পাশাপাশি খালের দু'পাড়ের পতিত জমির গাছপালা কর্তন করে বর্ষা মৌসুমে পরিকল্পিত ফসলের সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুলেছেন। দেশী-বিদেশী নানা জাতের অফ সিজনে তরমুজ, সামমাম, ভাঙ্গিসহ ১৭৩ রকমের ফল ও সবজি চাষ করে তিনি স্ম্যাট কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। বীজ বপনের ৭১ দিনের মধ্যে খালের দু'পাড়ের মাচায়-মাচায় এখন তরমুজ আর তরমুজ, সামমাম, ভাঙ্গি, করলা, লাউ, বরবটিসহ নানান ফসলের সমারোহ ঘটেছে। এখানে বেকার মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 

জানাগেছে, উপজেলার দেলুটির ২২ নং পোল্ডারের কালিনগর-সেনেরবেড়ে ১৫ একরের দিহিবুড়া খালটি সরকারি ভাবে খনন করা হয় পানি সরবরাহ ও কৃষি কাজের জন্য। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন টেন্ডারের মাধ্যমে এ খালটি ৩ বছর মেয়াদে সোনারতরী মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এর কাছে ইজারা দিলে এলাকার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। খালে লবণ পানি উত্তোলনের আশঙ্কায় স্থানীয়রা ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন। এক পর্যায়ে পুর্ব গজালিয়ার বাসিন্দা খাল ইজারাদার বিধান মন্ডল ১৫ একরের মধ্যে  জনসাধারণের জন্য ১৩ একর খাল উন্মুক্ত রেখে  মাত্র ২ একর খালে তিনি মিষ্টি পানির গলদা চিংড়ি ও রুই জাতীয় মাছ চাষ করেন। খালে মাছ চাষের পাশাপাশি তিনি খালের দু'পাড়ে স্থানীয় বালা বংশের স্তুপকৃত অপতিত প্রায় ৩৩ একর জমি সমান করে চলতি বর্ষ্যা মৌসুমে চাষের আওতায় এনে সবুজের সমারোহ সৃষ্টি করেছেন। 

এখানে প্রতিদিন ৩৫/৪০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে খালের দু'পাড়ের মাচায় দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক ১১ জাতের অপসিজেন তরমুজ, ৮ ধরনের সামমাম, ৬ জাতের ভাঙ্গিসহ ১৭৩ জাতের ফল ও সবজিতে  ভরে গেছে। জমি মালিক সফল কৃষক বিধান জানালেন, আমি ইউটিউব চ্যানেল গ্রুপের উন্নত বীজ সংগ্রহ করে স্থানীয় কৃষদের সহয়তায় ফল ও সবজি চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। ফসলে জৈবসার প্রয়োগ ও রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার করেছেন সিনজিনটা কোম্পানীর বালাই নাশক।

এ বিষয়ে স্থানীয় জমির মালিক সঞ্জয় বালা, নির্মল ও গৌরপদ বালা জানান, মাছের সথে খালের দু'পাড়ে আমাদের পতিত জমিতে তরমুজ, সামমাম সহ বহু রকমের সবজি চাষ করে বিধান মন্ডল সকলর দৃষ্টি কেড়েছেন। এ বিষয়ে বিধান মন্ডল  জানান, দেশী-বিদেশী জাতের ৩০ হাজার তরমুজ গাছে ২ বা ৩ টি করে হলেও উৎপাদন হবে ৬০/৬৫  হাজারের বেশি  তরমুজ। প্রত্যেকটির ওজন হবে আড়াই কেজি হতে সাড়ে ৮ কেজি পর্যন্ত। দাম কেজিতে ৪০ টাকায় বিক্রি হলে শুধু তরমুজই বিক্রি হবে ৬০/ ৬৫ লক্ষ টাকা। 

অন্যদিকে ৮ জাতের দেশী-বিদেশী ২৪ হাজার সামমাম'র গাছ আছে। প্রত্যেক গাছে ৩/৪ টি ফল ধরছে। ওজনে ৫শ গ্রাম হতে দেড় কেজি পর্যন্ত।  বাজার দর কেজিতে ৬০ টাকা হলে ১৫ লাখ হবে।

তিনি আরোও জানান, সবঠিক থাকলে আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে সব জাতের তরমুজ ও সামমাম বাজার করা সম্ভব হবে। এছাড়া ১৫ দিন পূর্বে সপ্তাহে নানা জাতের ২শ কেজি করলা, লাউ, বরবটি সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বাজার জাত করা শুরুে হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা আর ফসল বিক্রি হবে কোটি টাকার উপর। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কৃষক বিধান মন্ডল  আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে উৎপাদিত ফসলের বাজার জাত করতে খুব  হিমসিম ও অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে।