কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা সদর ও ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ও সেবার বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। সদর অফিসের ১তলা ভবনটির ছাদ ভেঙ্গে পড়ছে। ভীমও ফেটে গেছে এবং ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে। পরিপূর্ণ ঝুকি ভবনের নিচে বসে চিকিৎসকগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের বিপর্যয় ও দুর্ঘটনা।
মোট ১৯৩.৭৬ বর্গ কি. মি. আয়তন ও মোট ২৪৮ ৭৪০ জনসংখ্যার এ উপজেলার ১১ ইউনিয়নে মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ক্লিনিক ৮ টি এবং ইউনিয়ন পরিবার ও স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে ২ টি। এর মধ্যে ৩ টির অবস্থা মোটামুটি চলনসই হলেও বাকীগুলোর বেহাল দশা। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা, প্রয়োজনীয় জনবল ও ওষুধের অভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে।
বুধবার ( ২৪ সেপ্টেম্বর ] সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কম্পাউন্ডের ভেতর অবস্থিত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস ভবনের সামনে ও পেছনের দিকে এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। দীর্ঘদিনের পড়ে থাকা গাছপালা লতাপাতা ছাগল ও গোবর্জ্য জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে পঁচে দুর্গন্ধ চড়াচ্ছে। সাইনবোর্ড বিহীন ১তলা ভবনটির ছাদ ভেঙ্গে পড়ছে। ভীমও ফেটে গেছে এবং ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে। পরিপূর্ণ ঝুকি ভবনের নিচে বসে দুইজন এফডাব্লিউবি সুলেখা খাতুন, শিরীন আক্তার ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সেবাগ্রহীতা এবং স্থানীয়দের অভিযোগ, যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের বিপর্যয় ও দুর্ঘটনা।
এফ ডাব্লিউ বি কর্মকর্তা সুলেখা খাতুন বলেন, আমি সপ্তাহে ছয় দিন, শুধু একদিন শনিবার দিলালপুর স্বাস্থ্য ক্লিনিকে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। আমাদের এই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বৃষ্টি হলে কক্ষগুলোতে পানি পড়ে। গত দশ মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ওষুধ ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের চেকআপ ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেবা দেওয়া হচ্ছে। টয়লেটের অবস্থা ভালো নয়, সবমিলিয়ে নানা সমস্যা নিয়েই আমরা অফিস করে চলেছি।
স্থানীয় বাসিন্দা পৌর বিএনপির সহ সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন জামিল বলেন, এটি অনেক পুরনো পরিবার পরিকল্পনা অফিস। পৌর শহরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বহু রোগী এখানে সেবা নিতে আসেন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া শোনছি বেশ কয়েক মাস ধরে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। জনবল সংকট ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় রোগীর সংখ্যাও দিন দিন কমছে।
সেবা নিতে আসা বদরুননেছা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আগে অনেক রোগী আসতো এখন রোগী তেমন আসে না। যদি ওষুধ দেওয়া হতো তাহলে আগের মতো দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা আসতেন। ওষুধ পেলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম। এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১১ টা , উনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। পরে মুঠোফোনে কথা বললে উনি অফিসিয়াল অডিট সংক্রান্ত এক মিটিংয়ে জেলা অফিসে আছেন বলে জানান।
সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নাজমুস সালেহীন বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অফিস বিষয়টি আমার দায়িত্বে না থাকলেও যেহেতু আমি এই কম্পাউন্ডে থাকি, মাঝেমধ্যে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করি। আসলে সত্যি কথা বলতে আমার কমপ্লেক্সেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। স্বাস্থ্য এক্সেসরিজ, ডাক্তার সংকট, জনবলের অভাবসহ নানা সমস্যা। আমরা শুধু একটার পর একটা লিখিত আবেদন করেই যাচ্ছি কিন্তু উর্ধ্বতন কর্মকতাদের কাছ থেকে কোন সলিউশনই পাচ্ছি না। এদিকে বিভিন্ন মহলের চাপে আমরা আছি অস্বস্তিতে।
কয়েকটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও কল্যাণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়,সবচেয়ে করুণ অবস্থা ও ঝুঁকিতে আছে হিলচিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রটি। জরাজীর্ণ, ছাদ ভেঙে পড়ছে, সামান্য বৃষ্টিতেও পানি জমে যায়, ওষুধ সরবরাহ বন্ধ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কোনো সুপারভিশনের অভাব অনুপস্থিতি এক প্রকার প্রান্তিক স্বাস্থ্য সেবায় ধ্বস নেমেছে। ঔষধপত্র নেই, গর্ভবতী নারীদের চেক-আপ নেই। স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রের এই বেহাল দশায় দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী।
প্রাক্তন এক ওয়ার্ডবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ প্রতিষ্ঠানটি আমার ওয়ার্ডে অবস্থিত। আমার এলাকার শত শত মা-বোনসহ সাধারণ মানুষ এখান থেকে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করে উপকৃত হতো । আমার এলাকার এ প্রতিষ্ঠানটির ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা। এ ভবনটি অপসারণ করে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আমি জোর দাবী জানাচ্ছি।