নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন

গজারিয়ায় গ্রামবাসী-ইজারাদার মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা

এফএনএস (মোঃ মাহাবুবুর রহমান; মুন্সীগঞ্জ ) : | প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
গজারিয়ায় গ্রামবাসী-ইজারাদার মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করাকে কেন্দ্র করে নয়ানগর এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে বাধ্য হয়ে ড্রেজার অন্যত্র সরিয়ে নেয় ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের মারধরের শিকার হয়েছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিনিধি।বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে দশটার দিকে গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এই ঘটনা ঘটে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে নয়ানগর গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছিল অর্ধশতাধিক ড্রেজার। প্রথমে স্থানীয় লোকজন তাদের এখান থেকে সরে যেতে বললেও তারা বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে। পরবর্তীতে সকাল সাড়ে দশটার দিকে স্থানীয় লোকজন কয়েকটি ট্রলার নিয়ে ড্রেজার গুলোকে ধাওয়া দিলে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।স্থানীয়দের মারধরের শিকার হন জান্নাত হোসেন নামে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিনিধি। তাকে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। 

গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. খন্দকার আরশাদ কবির বলেন, নয়ানগর থেকে আমাদের হাসপাতালে জান্নাত হোসেন (২৭) নামে একজন রোগী এসেছেন। তার গায়ের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, অনেকদিন এই বালুমহালটি বন্ধ ছিল। চলতি মাসের প্রথম থেকে পুনরায় এটি আবার চালু করা হয়। গত কয়েকদিন থ্রি-অ্যাঙ্গেল শিপইয়ার্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে উত্তোলন করা হলেও আজ তারা নয়ানগর গ্রামের কাছাকাছি চলে আসে। আমরা গ্রামবাসী একজোট হয়ে তাদের প্রতিরোধ করেছি।

স্থানীয় বাসিন্দা সাহেরা বেগম বলেন, আমরা নদীর এই অংশে বালুমহাল চাই না। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে আমাদের গ্রাম ভেঙ্গে যাক এটা আমরা কখনোই হতে দিব না। আজ নারী-পুরুষ একজোট হয়ে আমরা বালুমহালে গিয়েছিলাম। বাধ্য হয়ে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন পালিয়ে গেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে বালুমহালটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো.আমিনুল ইসলাম জসিমের বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ঘটনা যেহেতু নদীতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নৌ পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, আজকের বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। আপনাদের মাধ্যমে প্রথম জানলাম। এটি সরকার অনুমোদিত একটি বালুমহাল। তারা যদি নিয়ম মেনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে আমাদের বলার কিছু নাই। তবে তারা যদি নিয়ম অমান্য করে নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করে তবে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ষোলআনী, নয়ানগর রমজানবেগ ও চর কালীপুরা মৌজায় মেঘনা নদীর ১২৮ একর এলাকায় একটি বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। চলতি বছর ২১ কোটি টাকায় বালুমহালটির ইজারা পায় আদন ড্রেজিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাট-ট্যাক্স সহ ২৬ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা জমা দিয়ে তারা বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে। নদীর তীর থেকে ১৫০০ ফুট দূরত্ব মেনে বালু উত্তোলন করার কথা থাকলেও স্থানীয়দের অভিযোগ প্রথম থেকেই ইজারাদার প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সীমানার বাহিরে গিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে