পতিত ফ্যাসিস্টদের সাথে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী, বললেন রিজভী

এফএনএস অনলাইন: | প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম
পতিত ফ্যাসিস্টদের সাথে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী, বললেন রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, “অনেকে যারা বলেন, ফ্যাসিস্টদের প্রত্যাবর্তন ঘটানোর জন্য চিন্তা করছেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য চিন্তা করছেন তারা কী ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা নেননি? আমাদের দেশে ইসলামপন্থি একটি রাজনৈতিক দল বরাবরই আমার মনে হয়েছে আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছে। তারা এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে। তারা(জামায়াতে ইসলামী) নিষিদ্ধ দল ছিলো।”

রিজভী আরও যোগ করেন, “শহীদ জিয়া তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন।কিন্তু এমন কোনো তাদের মিটিং নাই, এমন কোনো তাদের কর্মসূচি নাই যে, তারা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সমর্থন করেছেন এবং তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন নাই। এরপরে আমরা দেখেছি, প্রতিটি ঘটনায় তারা আওয়ামী লীগের সাথে, আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের সাথে এক হয়ে কাজ করেছেন।”

উদাহরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, “৮৬ সালে নির্বাচন যাওয়া সেটাও তারা আওয়ামী লীগ নির্বাচনে গেছে. মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এক আর কাজ করেছে আারেক। ঠিক একই ভাবে তারা(জামায়াতে ইসলামী)ও করেছে। এরপরে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ যে আন্দোলন করল সেই আন্দোলনেও তারা জ্বালাও-পোড়াও যে আন্দোলন হয়েছিলো সেই আন্দোলনেও আওয়ামী লীগের সাথে তারাও করেছে। বিভিন্ন জায়গায় ওই সময়ে তারা হত্যাও করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র টিটোকে শিবির (ইসলামী ছাত্র শিবির) গুলি করে হত্যা করেছিলো ১৯৯৫-৯৬ সালে যে আন্দোলন হয়েছিলো এটা তো কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যাওয়া ম্যাডাম(খালেদা জিয়া)যেতে চাননি তাদেরই নেতারা বাধ্য করেছিলো, না হলে তারা স্বতন্ত্রভাবে করবে। এখন আবার তারা স্বরুপে বেরিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের পূনর্বাসন চাচ্ছেন, ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক চাচ্ছেন। কিন্তু এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে এই দেশটি শেখ হাসিনার মতো রক্ত পিপাসু দানবকে প্রশ্রয় দিয়েছে নিজ দেশের মানুষকে হত্যা করার জন্য।”

‘কখনোই কোনো রক্ত পিপাসু, গণতন্ত্র ধ্বংসকারী এবং নিজের দেশের যে হত্যা করে ক্ষমতাকে চিরতরে আঁখড়ে রাখার যার ভাসনা ছিলো এরকম বাংলাদেশী মডেলে যে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলেন শেখ হাসিনা সেই ফ্যাসিবাদের পূনরুত্থান বা পুনর্জাগরণের কোনো সুযোগ বাংলাদেশে নাই’-উল্লেখ করেন তিনি।

রিজভী বলেন, ‘যে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলির জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন এবং গতকালকে যে আলাতগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে ডকুমেন্ট ও টেলিফোন কথোপকথনের ক্লিফসহ এসব যে কেউ শুনলে শিহরিত হয়ে উঠবে। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, আন্দোলন করেছি, রাজনীতি করেছি আমরা প্রত্যেকে মৃত্যুর মুখোমুখি ছিলাম। শেখ হাসিনার বর্বরতা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি, নিজেরা উপীড়নের শিকার হয়েছি, দিনের পর দিন রিমান্ডে থেকেছি, মাসের পর মাস জেলখানায় থেকেছি তার ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। কিন্তু এর গভীরে যে আরও ভয়াবহতা ছিলো তারা একটি আন্দোলনকে দমানোর জন্য কী ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিলো সেটা এখন প্রতিদিনকার যে আলামতগুলো আদালতে জমা হচ্ছে, সেখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা থেকে বুঝা যায়। সাবেক প্রধান মন্ত্রীর টেলিফোন কথোপকথনের যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে তাতেই আমাদের মধ্যে উদ্বেগ-শঙ্কা দেখা দিচ্ছে।”

‘যদি এই ফ্যাসিবাদী শক্তির আবার পুনরুত্থান ঘটে তাহলে ৫ আগস্টের আন্দোলনকামী মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষের কী ভয়ংকর পরিণতি ভোগ করতে হবে সেটা চিন্তা করে শরীরের লোম শিহরে উঠে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছেন, যত সরকারি ভবনে আগুন জ্বালিয়েছে, মেট্রোরেলের স্টেশনে যে আগুন লাগানো হলো সব শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে সেটা আজ সেই টেলিফোনের কথোপকথনে থেকে বেরিয়ে আসছে, সত্য বেরিয়ে আসছে। অথচ ওই সমস্ত নাশকতার ঘটনায় তখন আন্দোলনকারী মানুষদের ওপরে চাপানো হয়েছে। আমারকে ওই সময়ে মেট্রোরেল স্টেশনের পুড়ানোর মামলায় আসামী করা হয়েছিলো, নজরুল ইসলাম খানসহ আরও অনেকে সময়ে যারা গ্রেফতার হয়েছেন। অথচ এখন আমরা প্রমাণ পাচ্ছি এইসব ঘটনার সব নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা নিজেই। নাশকতার যে অভিযোগ ওই সময় করা হয়েছে সেই নাশকতা তিনি(শেখ হাসিনা) নিজে সৃষ্টি করেছেন। তিনি (শেখ হাসিনা) এমন এক সর্বনাশা খেলায় মেতেছিলেন যার ফলে দেশ, জাতি এবং মানুষের জানমাল বিপন্ন হয়েছিল ওইসময়ে’-যোগ করেন তিনি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে