ভিসা সংকটে বাংলাদেশ, নির্ভরযোগ্য পদক্ষেপ জরুরি

সম্পাদকীয়
| আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:০১ পিএম | প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:০১ পিএম
ভিসা সংকটে বাংলাদেশ, নির্ভরযোগ্য পদক্ষেপ জরুরি

বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বিদেশে ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া ক্রমাগত কঠিন হয়ে উঠছে। এতে ভ্রমণপ্রেমী, শিক্ষার্থী, চিকিৎসা ও ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা যেমন সমস্যায় পড়ছেন, তেমনি কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশগামীদের জন্যও পরিস্থিতি হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। অনেকেই বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও বিদেশের বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছেন। অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা থাকা দেশগুলোও এখন নানা অজুহাতে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। আগে সহজে ভিসা পাওয়া যেত এমন মধ্য এশিয়ার দেশগুলো -যেমন তাজিকিস্তান-এখন নিয়মিতভাবে বাংলাদেশিদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে। জানা যায়, তাজিকিস্তান ছিল সহজতম ভিসা-প্রাপ্তির দেশগুলোর একটি, কিন্তু এখন সেখানেও ভিসা পাওয়া কঠিন। গত দুই-আড়াই বছর ধরে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্কসহ এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ভিসা পেতে বাংলাদেশিদের নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে গত এক বছরে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই সংকটে বিপাকে পড়েছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও। জানা গেছে, ভ্রমণ ও কর্মী—এই দুই ধরনের ভিসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জটিলতা দেখা যাচ্ছে। অতিরিক্ত যাচাই-বাছাইয়ের কারণে ভিসা ইস্যুর হারও কমে গেছে। ট্রাভেল এজেন্সি মালিকরা বলছেন, অনেক দেশ ভিসা রেশিও কমিয়ে দিয়েছে। এর পেছনে রয়েছে কিছু গুরুতর কারণ- ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আবেদন, নির্ধারিত সময়ের বেশি অবস্থান, এবং তৃতীয় দেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ বলেন, এই সংকট আমাদের দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন। তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের আগে ইউরোপের ভিসা কিছুটা সহজ হলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আবেদন গ্রহণ কমে যায় এবং গ্রহণকৃত আবেদনগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই বাতিল হয়ে যায়। ভারতের ভিসা বন্ধ থাকাও ইউরোপের অনেক দেশের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। কারণ, বাংলাদেশে ইউরোপের অনেক দেশের দূতাবাস না থাকায় সেসব দেশের ভিসা সাধারণত দিল্লি থেকে ইস্যু হয়। কিন্তু ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশিরা সেখানে গিয়ে আবেদন করতে পারছেন না। যদিও বুলগেরিয়া তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে, কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশিদের জন্য ইন্দোনেশিয়ার অন-অ্যারাইভাল ভিসা এবং ভিয়েতনামের ভিসা বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমরা সরকারের কাছে জোরালো ও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানাই, যাতে বাংলাদেশিদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও কর্মসংস্থানের অধিকার পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।