কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সনাতন ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা শুরু হবে রোববার থেকে। দুর্গাপুজার অনবদ্য অনুসঙ্গ ঢাক ঢোল। এই ঢাক ঢোলের জন্য কটিয়াদীতে রয়েছে ঐহিত্যবাহী শতোর্ধ বছরের হাট। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকার পুরাতন বাজারে শনিবার সকাল থেকে রাত অবধি চলবে এ হাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাদ্যি যন্ত্রিগণ ইতিমধ্যে হাটে আসতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন জেলার পূজা আয়োজকগণ তাদের পছন্দমত ঢাক ঢোল নিয়ে যাবেন মন্ডপে তাদের পূজার কার্যাদি সম্পন্নের জন্য।
জানা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপুজা। শরতকালের এই ধর্মীয় উৎসব শারদীয় পুজা উৎসব হিসাবে আখ্যায়িত হয়ে আসছে। সারা দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বিরা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে এই উৎসব আয়োজন ও পালন করে থাকেন। এই উৎসবের অন্যতম অনুসঙ্গ ঢাক। পূর্ণতার জন্য ঢাক লাগবেই। তবে আয়োজকগণ শুধু ঢাকের মধ্যেই সীমা বদ্ধ থাকেন না। উৎসবকে জাঁকজমক করে তুলতে এর সাথে যোগ করেন ঢোল, বাঁশি, কর্তাল, নানা রকম বাদ্যি যন্ত্র। সম্প্রতি এর সাথে ব্যান্ডপার্টি ও যোগ করেন অনেক আয়োজক। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন ও দেবীর মর্ত্যে আগমণ অর্থাৎ শুভ শক্তির সঞ্চার, সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান ও কলাবউ পূজা, এই দিন ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চোখে কাজল পরানো হয়। অষ্টমীতে নবরাত্রি উৎসবের বিশেষ দিন। এই দিন দুর্গার মহিষাসুর বধের জন্য বিশেষ মাহাত্ম্যপূর্ণ, অষ্টমী ও নবমীর সংযোগকালে সন্ধিপূজা হয়। এসময় দেবী চন্ড ও মুণ্ড নামক দুই অসুরকে বধ। নবমীতে দেবী মহিষাসুর মদিনীর রূপপূজা নয় দিনের যুদ্ধ শেষে শুভ বিষয় এবং নারী শক্তির প্রকাশ পায়। বিজয়া দশমী পৌরানিক কাহিনী অনুসারে দেবী দুর্গা অশুভ শক্তির বিনাশ করে পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনেন। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দেবী দুর্গার জয়কে স্মরণ করা হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমীর এই ধারাবাহিক প্রতিটি পর্বেই ঢাক, ঢোল, বাঁশি, কর্তাল আর সুরের মুর্ছনা পুজার অনবদ্য কার্যাদি।
এই কার্যাদির অনুসঙ্গ হাতের নাগালে আনতেই সৃষ্টি হয় ঢাক ঢোলের হাট। দেশের আর কোথাও এই হাটের প্রচলন দেখা যায় না। এই শারদীয় উৎসবের অন্যতম অনুসঙ্গ ঢাক ঢোলের এক মাত্র হাট বসে কটিয়াদীতে। কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী পুরাতন বাজারে শতোর্ধ বছরের এ ঐতিহ্যের হাটেরও রয়েছে ইতিহাস। এই হাট শুধু শারদীয় পুজা উপলক্ষে বছরে একবারই বসে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ঢাক ঢোলের হাটের পরিচিতি রয়েছে। এখানে দূর দূরান্ত থেকে বাদ্যি যন্ত্রিরা ঢাক, ঢোল, সানাই, বাঁশি নিয়ে আসেন। পূজা আয়োজকগণ তাদের পছন্দের দলকে পুজাকালীন সময়ের জন্য কিনে নিয়ে যান।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে হাটে আগত সিদাম দাস বলেন, ত্রিশ বছর যাবত কটিয়াদী ঢাক ঢোলের হাটে আসি। আমার বাবা-দাদারাও পুজার সময় এ হাটে ঢাক নিয়ে আসতেন। সেই সুবাদে আমরাও আসি। তবে দিন দিন হাটের জৌসুল কমে যাচ্ছে। আগেরমত ঢাকিদের দল আর আসে না। এ বছর ২০হাজার টাকায় বায়না বদ্ধ হয়েছি। প্রত্যাশা আরো বেশি ছিল।
বাংলাদেশ পুজা উদযাাপন ফ্রন্ট কটিয়াদী উপজেলা শাখার সভাপতি দিলীপ সাহা বলেন, আমার বয়স ৭০। ছোট কাল থেকে দেখে এসেছি বাবা, দাদারা এ হাট থেকে পুজার জন্য ঢাক ঢোল নিয়ে যেতেন। ঐতিহ্যের এ ঢাক ঢোলের হাটে প্রযুক্তি ও অব্যবস্থাপনার কিছুটা প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে প্রযুক্তির প্রভাবে এ হাটের জৌলুস কমে গেছে। দূর দূরান্ত থেকে আগত ঢাকি ও আয়োজকদের প্রশ্রাব পায়খানা ও বিশ্রামাগারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নাই। হাটের স্থানটির জন্যও একটি মনোরম পরিবেশ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পূজা আয়োজকগনের নিকট অনুরোধ থাকবে হাটের ঐতিহ্য রক্ষার্থে হাট থেকেই যেন ঢাক ঢোল নেন। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করি।