সিলেটের শান্তিপূর্ণ নগরজীবন এখন ভয়াবহ সঙ্কটে নিমজ্জিত। কারণ, দিন দিন বেড়ে চলা ব্যাটারি চালিত রিকশার কারণে সড়কে নিরাপত্তাহীনতা, যানজট, বিদ্যুৎ সংকট ও পরিবেশ দূষণ চরমে পৌঁছেছে। পুলিশ কমিশনার হিসেবে নয়, এক বাবা ও সচেতন নাগরিক হিসেবে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধান এই বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারন হিসেবে ব্যাটারি রিকশার অবৈধ ও বেপরোয়া চলাচল চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা ফাউন্ডেশনের ২০২৪ সালের তথ্য মতে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে এই অবৈধ যানবাহনের কারণে। চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সের অভাব, সড়ক নিরাপত্তা নিয়ম অমান্য এবং যানবাহনে মানসম্মত ব্রেক, সিগন্যালের অভাবে নানাবিধ দুর্ঘটনা ঘটছে, যা শিশু থেকে বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী থেকে কর্মজীবী কাউকেই রক্ষা করছে না।
আরও ভয়াবহ যে, সিলেট শহরের বিদ্যুৎ ব্যবহারে ৪০ হাজার ব্যাটারি রিকশার চার্জিংয়ে দৈনিক প্রায় ২ লাখ কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে, যা প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের ঘরে আলো জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট। শহরের বিদ্যুৎ সংকটের পেছনে এই অবৈধ ব্যাটারি রিকশার অবদান অপরিসীম।
বিষাক্ত সীসা মুক্ত ব্যাটারির অভাবে পরিবেশ দূষণের মাত্রাও বাড়ছে। ডঐঙ এর ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুসারে সীসা মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। দূষিত মাটি ও পানির কারণে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে।
সাধারণ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও দীর্ঘ যানজট এবং ব্যাটারি রিকশার অগোছালো চলাচল নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যানজটে আটকে থাকা মানুষের মধ্যে ডিপ্রেশনের হার গড়ের চেয়ে ৪০% বেশি।
আইনগত দিক থেকেও, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও বিদ্যুৎ আইন স্পষ্টভাবে ব্যাটারি রিকশার অবৈধতা ঘোষণা করেছে এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ইতিমধ্যেই ব্যাটারি রিকশা বন্ধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে।
পুলিশ কমিশনারের মানবিক আবেদন-“আপনার সন্তানকে ভালোবাসলে, ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে দাঁড়ান। সাময়িক সুবিধার জন্য শহর, পরিবেশ ও প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করবেন না।”
সমাধানের জন্য পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু, সাইকেল ও পদচারী বান্ধব উদ্যোগ, এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট আধুনিকীকরণ অপরিহার্য। সিলেটকে করতে হবে শান্তির, সৌন্দর্যের ও নিরাপত্তার নগর।
ব্যাটারি রিকশার বিষাক্ত চাকায় পিষ্ট হয়ে কেউ যেন না পড়ে-সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে সিলেটবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার।