ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগারের নির্মাণ কাজ সাত বছর আগে শেষ হলেও পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানি শোধনাগারটিতে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পর কয়েকটি স্তরের ফিল্টার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পানি সরবরাহ করার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও সুফল পাচ্ছেন না স্থানীয় জনসাধারন।দীর্ঘসময় বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে মূল্যবান জিনিসপত্র। পুরোপুরি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এটি। পরিণত হয়েছে জঙ্গলে। ওভারহেড ট্যাঙ্ক ও শোধনাগারটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার ও ওভারহেড পানির ট্যাঙ্ক নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।
প্রায় ৭ বছর আগে ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এক দিনের জন্য পানি সরবরাহ সম্ভব হয়নি। শোধনাগারটি চালু না থাকায় নষ্ট হচ্ছে সুইস, বাল্ব, মোটর, ফিল্টার, পাইপ, রিজার্ভ ট্যাংক, পাম্প গ্যালারি, পানির ট্যাংক, জেনারেটর ও ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। তালাবদ্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ শোধনাগার ব্যবহারের অনুপযোগী আর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। পৌরসভার অধিনে প্রায় ৬০ হাজার জনসাধারন বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আয়রন ও আর্সেনিক মুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি আর কোন দিন পাবে কিনা সন্ধিহান রয়েছে।জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বলছেন, মহেশপুর পৌরসভা এলাকার ৯৬ নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। দীর্ঘদিন এ পানি পান করলে মারাত্মক রোগব্যাধি হতে পারে। পৌরসভার সরবরাহ করা পানিতে অতিমাত্রায় আয়রন থাকায় তা পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে আর্সেনিক ও আয়রন দূরীকরণ প্লান্ট স্থাপনের জন্য মহেশপুর পৌরসভা একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়।এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪ কোটি ২৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগের তত্বাবধানে ২০১৯ সালে কাজ শেষ হয়।সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হলেও অদ্যবধি পর্যন্ত জনসাধারনের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। যে কারনে পৌর এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
শহরের জলিলপুর বাজারের বসবাসকারি ও ব্যবসায়িরা বলেন, এ শহরে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব রয়েছে। মানুষ নিজস্ব টিউবওয়েলের পানি পান করে। এ পানিতে মাত্রারিক্ত আর্সেনিক রয়েছে।পানি শোধনাগার নির্মাণের পর ৭ বছর ধরে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।ভারতীয় সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর পৌরসভার ভূগর্ভস্থ পানিতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে আয়রন। এছাড়া এ এলাকার অনেক টিউবওয়েলে আর্সেনিক বিষ রয়েছে। যে কারণে পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্টটি চালু হলে এলাকার মানুষ সুফল পাবে।স্থানীয়দের অভিযোগ,মূলঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেনি। তৎকালীন ফ্যাসিস আওয়ামী লীগ সরকারের দলের নেতারা দলীয় প্রভাব বিস্তার করে মূল ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে নিজেদের মতো করে কাজ করেছেন। প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হলেও কোনো কাজে আসছে না। তালাবদ্ধ অবস্থায় বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে। নষ্ট হচ্ছে জিনিসপত্র। ভবন গুলোর জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিনত হয়ে পড়েছে। চারপাশ জঙ্গলে ছেয়ে গেছে। এখানে এখন সাপ আর পোকামাকড়ের ঘরবসতি। এটি আদৌ চালু করা সম্ভব কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এত টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হলো অথচ চালু করা হলো না। তা হলে নির্মাণ করার দরকার কী ছিল? আসলে টাকা লুট করার জন্যই এসব প্রকল্প গ্রহন করে সরকারি দলের লোক। পানি শোধনাগারটি দ্রুত চালু করা হোক। বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হোক।
ঘণ্টায় ১ লাখ ৮০ হাজার লিটার পানি সরবারহের ক্ষমতা সম্পন্ন প্লান্ট থেকে মহেশপুর পৌরবাসীরস প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে এ প্রজল্পটি গ্রহন করা হয়েছিল। ঝিনাইদহ জেলার প্রথম বৃহত বিশুদ্ধ পানির প্লান্টটি তৈরির কাজ করছে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর।পৌরসভা এলাকার ছয়টি সাব মার্সেবল পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে প্লান্ট হাউজে রাখা হবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কোনো রকমের কেমিক্যাল দ্রব্য ছাড়ায় প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পানি শোধন করার পর পৌরবাসীর মধ্যে সরবরাহ করা হবে।কিন্তু বাস্তবে কোন পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন হয়নি।বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য সেখানে নিম্নমানের মালামাল ও নিম্ন পাথর, ফিল্টার,পানি পাম্প বসিয়ে প্রকল্প থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পৌরবাসীর বড় দুর্ভোগটিকে পুঁজি করে নিজেদের পকেট ভর্তি করেছে।পৌরসভা কর্তপক্ষ মোরামত প্রকল্পটি কিভাবে চালু করা যাবে এমন উদ্যোগ গ্রহন করেনি।মহেশপুর পৌরসভায় বিগত ফ্যাসিস সরকারের আমলে যারা যারা ঠিকাদারের কাজ করেছেন সকল কেই সাবেক এমপি শফিকুল আজম চঞ্চলের নিজস্ব লোক।
মহেশপুর এলাকার পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। লক্ষ্য ছিল পৌরবাসীর ঘরে ঘরে নিরাপদ পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ৭ বছর অতিবাহিত হলেও এক ফোঁটা পানি পৌঁছায়নি পৌরবাসীর কাছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করে নির্মিত এ প্রকল্পে চরম দুর্নীতি ও লুটপাট করা হয়েছে,কিন্তু নেই কোনো পানির সংযোগ ব্যবস্থা।ফলে এটি দৃশ্যমান কাঠামো বাস্তব সুবিধা শূন্য। ট্যাংকই এখন মরণফাঁদ।পৌরবাসীর বুকে শতটনের একটি ট্যাংকি চাপিয়ে দিয়ে কেটে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টরা। সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাটকারী দুর্নীতিবাজ কর্তপক্ষ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। কারণ সরকারের এমপি-দলীয় নেতারাই ছিলেন লোপাটে। এ প্রকল্প নির্মাণের জন্যে ওই এলাকায় অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছদ করা হয়েছে।নিম্নমানের কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রান নাশের হুমকি ও অনেকদিন জেল খাটতে হয়েছে।সাধারণ মানুষের অভিযোগ সাড়েকোটি টাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাগ্যো উন্নয়নে ঘটছে লুটপাটকারীদের।
প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে খেলার মাঠে শিশু শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা, সামাজিক কাজ এবং বাজারের একাংশ প্রানবন্ধ থাকতো লোক সমাগমে। প্রকল্পের স্থান নির্বাচনের সময় স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করেছিল। আমলে নেয়নি তৎকালীন মেয়র ও সাবেক এমপি শফিকুল আযম চঞ্চল। তথ্যে সহযোগিতা করেন কোটচাদপুর প্রতিনিধি কাজী মৃদৃল ও বাবর আলী মহেশপুর।