চাঁদপুরে ৭ খুন: জাহাজ শ্রমিকদের ধর্মঘটের ২য় দিন চলছে

এফএনএস (মিজানুর রহমান; চাঁদপুর) :
| আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম | প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:১৩ পিএম
চাঁদপুরে ৭ খুন: জাহাজ শ্রমিকদের ধর্মঘটের ২য় দিন চলছে

চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মাঝের চরে ৭ খুনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তিসহ নানা দাবীতে পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের ২ দিনের ধর্মঘট চলছে। শুক্রবার ও গতকাল শনিবার সকাল থেকেই বন্ধ ছিলো সকল প্রকারের পণ্যবাহী নৌযান।

২৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌযান পরিবহনের চাঁদপুর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শ. আ. মাহফুজ উল আলম মোল্লা।

তিনি বলেন, নৌযান শ্রমিকরা ৭ খুনের ঘটনায় যে দাবী দাবা নিয়ে ধর্মঘটে নেমেছেন। এতে আমাদের ইজারাযুক্ত ঘাটগুলো অচলের মুখে রয়েছে। এভাবে চলতে পারেনা। তাই আমরা রোববারের মধ্যেই আমাদের উর্দ্ধতনকে নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সাথে সমাধানে বসবো।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরে পুরানবাজার, চৌধুরীঘাট, লঞ্চঘাট ও রঘুনাথপুর অর্থাৎ মাত্র ৪টি ইজারাভুক্ত ঘাটে জাহাজ হতে মাল লোড আনলোড হয়ে থাকে। এরমধ্যে রঘুনাথপুর ঘাটটি ৪৪ হাজার টাকায় ইজারা হলেও বাকি ঘাটগুলোর ইজারা বছরে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা। প্রতিটি ঘাটে দিনে গড়ে ৮০/৯০টি মালবাহী, তৈল-গ্যাসবাহী, বালুবাহীসহ সকল প্রকার পণ্যবাহী নৌযানে লোডিং আর লোডিং হয়। অর্থাৎ গড়ে জেলার ঘাট গুলোতে দিনে ৩-৪শ’ পণ্যবাহী জাহাজে লোড আনলোডের কাজ হয়। তাই এভাবে কর্মবিরতি চলতে থাকলে অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মবিরতিতে থাকা শ্রমিকরা বলছেন, চাঁদপুরে ইজারাভুক্ত পণ্যবাহী ট্রলারঘাট ৪টি হলেও ইজারাবিহীন ঘাটের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। কাজেই এতে পণ্যবাহী ট্রলারের সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি আয় ব্যায়ের হিসাবও বৃদ্ধি পাবে। কোটি কোটি টাকার কাঁচামালের আমদানি রপ্তানী কিন্তু এই নৌপথেই হয়ে থাকে। তাই দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের এ নৌ ধর্মঘট চলবে। আর এ দাবী ত শুধু জেলাতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি সারাদেশব্যাপী চলছে এবং চলবে। বিশেষ বিবেচনায় যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করলেও এটিও দাবী আদায়ের লক্ষণ না পেলে বন্ধ করে দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আমরা শ্রমিকরা ত এমনেও মরছি, এবার না হয় পুরোদেশবাসীকে নিয়ে মরবো।

এর আগে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে হরিনা ঘাটের কাছে মাঝেরচর এলাকায় এম. ভি. আল-বাখেরা জাহাজে সন্ত্রাসী কায়দায় নির্মম হত্যাকাণ্ডে মাষ্টারসহ ৭ জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারন উদ্ঘাটন, হত্যাকারীদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তার, মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারি ভাবে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, সকল নৌপথে সন্ত্রাস চাঁদাবাজী ডাকাতী বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। তাই বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ঘোষিত ২৬ ডিসেম্বর রাত ১২টা হতে মালবাহী, তৈল-গ্যাসবাহী, বালুবাহীসহ সকল প্রকার পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা সফল করতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বেসিক ইউনিয়ন ও শাখাসমুহের নেতৃবৃন্দসহ সকল নৌযান শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেন।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা হারুনুর রশীদ বলেন, চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া রক্তমাখা চাইনিজ কুড়ালের ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং গ্রেপ্তারকৃত ইরফানের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলেছে কিনা তা গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে চাই। এছাড়াও ইরফান একা জাহাজ চালাতে কতটা পারদর্শী সেটাও সরাসরি গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা সরাসরি দেখতে চাই। আর তা না পারলে এ ঘটনায় ৮-১০ কে অজ্ঞাত আসামী দেখিয়ে জাহাজ মালিক মাহাবুব মোর্শেদ যে মামলা করেছে সে অনুযায়ী ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ আমাদের দাবী মেনে নেয়া হউক। তা না হলে আমাদের এই ধর্মঘট চলবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, নৌযান শ্রমিক নেতাদের দাবী নিয়ে আলোচনার চেষ্টা চলছে। দ্রুতই ধর্মঘটের সমাধান আসবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে