কুমিরে টেনে নেওয়ার ৭ ঘন্টা পর সুন্দরবনের করমজল খাল থেকে জেলে সুব্রত মন্ডলের (৩২) লাশ উদ্ধার করেছে বনবিভাগ ও গ্রামবাসী। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বুধবার (১ অক্টোবর) দুপুরে খুলনার দাকোপ উপজেলার ঢাংমারী গ্রামে সুব্রতের সৎকার সম্পন্ন হয়। এর আগে মংগলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরে খাল সাঁতার দিয়ে ফেরার পথে কুমিরের আক্রমণের শিকার হয় সে।
এদিকে, লাশ বাড়িতে আসতেই উঠোন ভরে যায় শোকের মাতমে। আর্তনাদ করতে থাকেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, শয্যাশায়ী বাবা, বৃদ্ধা মা আর ছোট তিন ভাই। কারও মুখে কোনো শব্দ নেই- শুধু কান্নার রোল।
সুব্রত ছিলেন সুন্দরবনের বনজীবী। জঙ্গলে যেতেন, কাঁকড়া ধরে সংসার চালাতেন। সেই রোজগারেই চলত পরিবার। মঙ্গলবারও সঙ্গীদের নিয়ে গিয়েছিলেন জঙ্গলে। ফেরার পথে পার হতে হলো করমজল খাল, যেখানে কুমিরের ভয় সবসময় ভর করে থাকে।
সুব্রতের মৃত্যুতে সন্তান সম্ভবা স্ত্রী মুন্নি খাঁ আর্তনাদ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছিল। মুন্নি ভালবেসে বছর খানেক আগে বিয়ে করেছিলো সুব্রতকে। বিয়ের বছর খানেকের মধ্যে স্বামীহারা হয়ে অনেকটা দিশেহারা সে।
শোকাহত স্ত্রী মুন্নি খা বলেন, আমার পৃথিবীটা একেবারে অন্ধকার হয়ে গেল। অনাগত সন্তান আর বাবার মুখ দেখতে পেলনা। কে নিবে তার দায়িত্ব?
সহকর্মীরা জানান, পাঁচজনের দল সাঁতার কেটে খাল পার হয়ে যায়। সুব্রত উঠতে গিয়ে হোঁচট খেলেন পানিতে। ঠিক তখনই বিশাল কুমির ঝাঁপিয়ে পড়ল। এক মুহূর্তে তার পা কামড়ে ধরে। সহযাত্রীরা প্রাণপণ চেষ্টা করে তাকে টেনে তুলতে। কিন্তু শেষমেশ কুমিরের শক্তির কাছে হার মানতে হয় তাদের। সুব্রতকে নিয়ে অদৃশ্য হয় সুন্দরবনের সেই ভয়াল প্রাণী।
কিছুক্ষণ পর কুমির আবার ভেসে উঠে-মুখে সুব্রতকে ঝুলিয়ে। সহযাত্রীরা পিছু নেয়। খবর পেয়ে বনরক্ষীদের ট্রলারও আসে। কিন্তু হঠাৎ আবার ডুব দেয় কুমির। খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রাম থেকে মানুষ ছুটে আসে করমজল খালে। সাহসী কয়েকজন পানিতে নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বহু চেষ্টার পর তুলে আনা হয় সুব্রত মণ্ডলের নিথর দেহ।
এ ব্যাপারে বানিয়াশান্তা ইউপি চেয়ারম্যান সুদেব রায় বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অসহায় পরিবারটিকে সাধ্যমত সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছি।
বন কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, যেহেতু সুব্রত পাস নিয়ে বনে গিয়েছিল। তাই কুমিরের আক্রমণে নিহত পরিবারকে সরকারিভাবে ৩লাখ টাকা অনুদান প্রদাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছর একই করমজল খালে কুমিরের আক্রমণে প্রাণ হারান ঢাংমারীর ভোজনখালীর জেলে মোশারেফ। তবে তখন নিষিদ্ধ সময় থাকায় ও তার পাস না থাকায় তার পরিবার কোন সরকারি অনুদান পাননি।